২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্নীতি কমলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরো বাড়বে

সিজিএসের আলোচনা সভায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সিজিএসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত পিটার ডি হাস : নয়া দিগন্ত -


মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, দুর্নীতি একটি পরজীবী যা সমাজের সম্পদ শুষে বেঁচে থাকে। এটা সমাজের শক্তিকে ক্ষয় করে। এটি বাণিজ্য ও সরকারের প্রতিটি স্তরকে ধ্বংস করতে পারে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ বাংলাদেশের মানুষকে মর্যাদার সাথে বাঁচতে এবং এ দেশে আরো বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সহায়ক হবে।


রাজধানীর এক হোটেলে গতকাল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ডাক’ বিষয়ক এক সম্মেলনে তিনি মঙ্গলবার এ সব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। আয়োজনের অংশীদারিত্বে ছিল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্নীতি কোনো না কোনো পন্থায় বিশ্বব্যাপী বিরাজ করে। আমরা এটির সাথে খুবই পরিচিত। যেমন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গেলে, পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে বা কোনো জমির নিবন্ধন করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ-দুর্নীতির এ ধরনের আরো অনেক নজির রয়েছে, যা সম্পর্কে কম বেশি সবাই অবগত। দুঃখজনকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রেও বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। তবে দুর্নীতিবাজদের পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেয়া এবং তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতে বাধ্য করা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগে আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে এটিকে প্রধান প্রতিপাদ্য করা হয়েছিল। দুর্নীতি দমন আজো যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারে রয়েছে।


দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এতে মানিলন্ডারিং, ডিজিটাল এভিডেন্স ও আর্থিক অপরাধগুলো তদন্ত ও প্রসিকিউশনের ওপর আলোকপাত করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি দমনে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং সরকারি ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে নগদ অর্থ লেনদেনের পরিবর্তে অনলাইনে লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। বিভিন্ন সেবার জন্য বিল, জরিমানা বা কর জনগণ অনলাইনে জমা দিতে পারে। এই পদ্ধতিতে জনগণের অর্থ আমলাদের পকেটে যাওয়ার সুযোগ সীমিত করতে পারে। দুর্নীতির ঘটনাগুলো তদন্ত এবং দুর্নীতিবাজদের পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিতে সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও মুক্ত গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নৈতিক ব্যবসা চর্চা প্রচারের মাধ্যমে আমরা সব আকারের ব্যবসার জন্য আরো বেশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারি এবং আরো বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারি।’


ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) নতুন ব্যবসার জন্য একটি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, এটি নতুন ব্যবসা নিবন্ধনকে আরো স্বচ্ছ, দ্রুত এবং আরো সাশ্রয়ী করে তুলবে।
ইউএসএআইডি অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গেও কাজ করেছে। তিনি বলেন, এই প্রচেষ্টা সরকারের পরিবর্তে বেসরকারি খাতকে বন্দরে চালান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়। হাস বলেছেন, প্রক্রিয়াটি আরো স্বচ্ছ হয়েছে এবং বেসরকারি খাত ও সরকারের মধ্যে আস্থার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিএলডিপি) বাংলাদেশের আইনি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য কর্মশালা পরিচালনার জন্য প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে।


সিএলডিপি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গেও কাজ করে, যাতে আর্থিক স্বচ্ছতা উন্নত করে পৌর শাসনের উন্নতি হয়। এই কর্মসূচির অধীনে, সিএলডিপি জানুয়ারিতে মিয়ামিতে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রসহ একটি প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানায়।
হাস বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সমন্বয় কেন্দ্রের মধ্যেও একটি সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি বিভিন্নভাবে হতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, মার্কিন আইন যেমন আমেরিকান নাগরিক ও ব্যবসাগুলোকে দুর্নীতির জন্য দায়বদ্ধ রাখে, তেমনি আইন লঙ্ঘন করে দুর্নীতি চর্চাকারী অ-নাগরিকদের জন্যও আইন ও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।


বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি কমাতে কী করতে পারে- এ প্রশ্রের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি মোকাবেলা করতে এবং শাসন ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে ভাবা যেতে পারে।’
হাস বলেন, একটি উপায় হলো সরকারের সঙ্গে করা নগদ আর্থিক লেনদেনগুলো অনলাইনে সম্পন্নের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, ‘নাগরিকরা ইলেকট্রনিকভাবে বিল, জরিমানা ও কর পরিশোধ করতে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের টাকায় আমলাদের পকেট ভরার সুযোগ কমিয়ে দেবে। হাস দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত ও উন্মোচনে একটি সক্রিয় নাগরিক সমাজ এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সুবিধা রয়েছে, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হবে। ‘কিন্তু আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতারা আমাকে বলছেন: বহু-জাতীয় সংস্থাগুলোর কাছে বিনিয়োগের বহু বিকল্প রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, যে দেশে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে কম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং তাদের ব্যবসার জন্য সর্বোত্তম লজিস্টিক অবকাঠামো আছে এমন কোনো দেশকেই তারা বেছে নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের

সকল