২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ক্রাইমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্রের চালান ধ্বংস রাশিয়ার

-


কৃষ্ণ সাগরীয় উপদ্বীপ ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার কালিবার ক্ষেপণাস্ত্রের বড় একটি চালানে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। ওই সব ক্ষেপণাস্ত্র রেলপথে পরিবহন করা হয়েছিল। মস্কো বলছে, ড্রোনের মাধ্যমে হামলা আক্রমণ করা হয়েছে। মস্কোর দখলে থাকা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের উত্তরে বিস্ফোরণের ফলে রেলপথে পরিবহন করা রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের কথা জানায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ দিকে উপদ্বীপের ঝানকোই শহরের রুশ-নিযুক্ত প্রধান বলেছেন, ড্রোন দ্বারা আক্রমণ করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।


কিভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের চালানে হামলা চালানো হয়েছে বা কারা করেছে, এ নিয়ে বরাবরের মতোই স্পষ্ট করেনি ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের পর ক্রাইমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের বহরে এটাই প্রথম শক্তিশালী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রাইমিয়া দখল করে নিজেদের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে রাশিয়া। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া আবারো ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেছে। পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনীও। ক্রাইমিয়া ভূখণ্ডকে পুনরুদ্ধারে প্রতিজ্ঞা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটছে। যদিও এসব হামলার কোনোটির দায় স্বীকার করেনি কিয়েভ। ২০২২ সালে ক্রাইমিয়ার কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করেন পুতিন। সোমবার বিবৃতিতে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, এমন বিস্ফোরণে রাশিয়াকে নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে এবং ইউক্রেনীয় ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরো এগিয়ে দিয়েছে। কিয়েভের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌবহরের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার প্রশাসক ইহোর এভিন বলেন, ৩৩ বছর বয়সী এক লোক ড্রোনের আঘাতে আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ক্রাইমিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে আইভিন বলেন, ড্রোন হামলায় একাধিক ভবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এবার আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা রাশিয়ার : এ দিকে আলজাজিরা জানায়, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর এবার উল্টো মামলা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিচারক ও প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে। সোমবার এ ফৌজদারি মামলা দায়ের করে মস্কোর তদন্ত কমিটি। আইসিসির বিরুদ্ধে মামলায় বিচারক তোমোকো আকানে, রোজারিও সালভাতোরে আইতালা, সার্জিও জেরার্ডো উগালদে গোদিনেজ ও প্রসিকিউটর করিম খানকে আসামি করেছে ক্রেমলিন। রুশ তদন্ত কমিটি বলছে, পুতিনের পক্ষ থেকে ফৌজদারি দায়বদ্ধতার কোনো ভিত্তি নেই। এর কারণ ১৯৭৩ সালের জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনের অধীনে থাকা রাষ্ট্রপ্রধানরা পূর্ণ দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন। শুক্রবার আইসিসির প্রেসিডেন্ট পিওর হফম্যানস্কি আলজাজিরাকে বলেন, এটি ‘সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক’ যে রাশিয়া পরোয়ানা জারি করার জন্য আইসিসির অংশ নয়।


অঘোষিত সফরে কিয়েভে জাপানি প্রধানমন্ত্রী : অন্য দিকে বিবিসি জানায়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা মঙ্গলবার অঘোষিত সফরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ পৌঁছেছেন। কিয়েভে তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠক করবেন। জাপানের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে একটি ভিডিওফুটেজ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, একটি ট্রেন স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে হাঁটছেন কিশিদা। তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। কিশিদার কিয়েভ সফর ঘোষণার সময় জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার কথা তুলে ধরবেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। ভারত সফর শেষে টোকিওতে ফেরার কথা ছিল কিশিদার। কিন্তু তিনি পরিকল্পনা পাল্টে ইউক্রেন সফরের সিদ্ধান্ত নেন। এনএইচকের প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, পোল্যান্ডের সীমান্ত শহর প্রেজেমিসল থেকে কিয়েভগামী একটি ট্রেনে চড়ছেন কিশিদা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও কিয়েভকে সমর্থনে পশ্চিমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাপান। বিরল পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও দেশটির শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে টোকিও। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে জাপানের প্রতিরক্ষা উদ্যোগ সীমিত। ফলে ইউক্রেনকে কোনো সামরিক সহযোগিতা দেয়নি জাপান।


‘যুদ্ধ এখন বন্ধ হোক’ চায় না যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে তিন দিনের সফরে বর্তমানে মস্কোতে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার (২০ মার্চ) রাশিয়া পৌঁছান শি। এ দুই নেতার প্রধান আলোচ্য বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মস্কো যাওয়ার প্রায় এক মাস আগে যুদ্ধ বন্ধে ১২ দফার একটি শান্তি প্রস্তাব দেয় চীন। সেখানে জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার কথা বলেছে বেইজিং। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবারই চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে পুতিন বলেছেন, চীন যে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। তবে চীন এখনই যুদ্ধ বন্ধ করার যে কথা বলছে, সেটির বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শি জিনপিং মস্কো যাওয়ার পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তৎপর হয়েছে মার্কিনিরা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন দাবি করেছেন চীন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এতে রুশ সেনাদের ইউক্রেন ছাড়ার বিষয়টির উল্লেখ নেই। তার মতে, যদি সেনা প্রত্যাহার ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হয় তা হলে রাশিয়া এ সময়টা ব্যবহার করে নিজ সেনাদের আবারো সংগঠিত করার চেষ্টা করবে এবং পরবর্তীতে সময় বুঝে হামলা চালাবে। এ ব্যাপারে ব্লিনকেন বলেছেন, (সেনা প্রত্যাহার ছাড়া) এখন যুদ্ধবিরতির বিষয়টি রাশিয়ার বিজয়কে সমর্থন জানানোর শামিল হবে। এটি স্বাধীন প্রতিবেশী দেশের ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখল করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেবে। তিনি আরো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন জানায় যেটি শুধু একটি টেকসই ও দীর্ঘকালীন শান্তি আনবে।’


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, চীনের শান্তি প্রস্তাবে বেসামরিকদের নিরাপত্তা এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যে কথা বলা হয়েছে, সেটিকে সমর্থন জানান তারা। তবে শান্তি প্রস্তাবের মূল বিষয় হতে হবে ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা অক্ষুণ্ন রাখা।’ তিনি বলেছেন, ‘যে পরিকল্পনায় এ মূল বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি সেটি যুদ্ধ সামরিক সময় বন্ধ রাখার একটি কৌশল অথবা সময়ক্ষেপণ। যার মাধ্যমে অন্যায় সংঘটিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চীন সমর্থিত রাশিয়ার কোনো কৌশলের ফাঁদে যেন বিশ্ব পা না দেয়। এ ছাড়া চীনেরও কঠোর সমালোচনা করেছে ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, চীন যে চেষ্টা চালাচ্ছে সেটি নির্দেশ করছে, ইউক্রেনে রুশ সেনারা যেসব অপরাধ সংঘটিত করেছেন সেগুলোর জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করার কোনো দায়বদ্ধতা নেই বেইজিংয়ের। উল্টো তিনি দাবি করেছেন, চীন রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে প্রশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছে।
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জন কিরবি বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউজ খুব কাছ থেকে পুতিন-শি জিনপিংয়ের বৈঠক ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।’ তিনিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাথে সুর মিলিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি মানে রাশিয়ার অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া, সেনাদের প্রশিক্ষণ ও রসদ পাঠানোর জন্য পুতিনকে সময় দেয়া, যেন যখন যে সময় প্রয়োজন পুতিন আবারো তার হামলা শুরু করতে পারেন।’ সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেছেন, চীন এখন যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রত্যাখ্যান’ করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement