২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রেকর্ডের ম্যাচ পরিত্যক্ত

৬০ বলে শতরান পূর্ণ করার পর মুশফিকুর রহীম : নয়া দিগন্ত -

-সর্বোচ্চ দলীয় রান ৩৪৯
-মুশফিকের দ্রুততম সেঞ্চুরি ও ৭ হাজার রান

-তামিমের ১৫ হাজার রান
-লিটনের দ্রুততম ২ হাজার রান

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি নামে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলমান বৃষ্টিতে ক্ষীণ হয়ে যায় ফলাফলের সম্ভাবনা। সাড়ে ৯টা অবধি কাট অফ টাইম থাকলেও এক ঘণ্টা আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ম্যাচটি। প্রায় ৯ বছর পর বাংলাদেশে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো।
শিহরণ জাগানিয়া মুহূর্ত। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ অনেকেরই। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হার্টবিটও মিস করেছেন অনেকে। দমবদ্ধ পরিস্থিতি। চরম নাটকীয়তা-উৎকণ্ঠা-রোমাঞ্চ-নখ কামড়ানো-দাঁতে দাঁত চাপা অবস্থা। অপেক্ষা কেবল ১ রানের জনথ্য। চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়ার ক্ষণ। করতালি নাকি আরেকবার আফসোস? সিলেটের ২২ গজে কোনটা অপেক্ষা করছে। ইনিংসের শেষ বল। এগিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহাম হিউম। ডান হাতি পেসারের লো ফুলটস বল ডিপ মিড উইকেটে পাঠিয়ে মুশফিকের ভো দৌড়। ৯৯ থেকে মুশফিকের রান পৌঁছে গেল ১০০-তে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার পাঁচেক দর্শকের কণ্ঠে গগনবিদারী চিৎকার। ‘মুশফিক...মুশফিক...মুশফিক।’
প্রান্ত বদল শেষেও দৌড় থামান না মুশফিক। ছুটে যান ড্রেসিংরুমের দিকে। বথ্যাট-হেলমেট আকাশে তুলে সৃষ্টি কর্তার উদ্দেশে কিংবা নিজের সফলতায় অথবা ম্যানেজমেন্টকে নতুন বার্তা দিতে গগনবিদারী চিৎকার। হাত থেকে সেগুলো ফেলে এরপর শোকরানা সিজদা। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সংমিশ্রণে ভিন্ন এক ভালোলাগা-অনুভূতি। ততক্ষণে সতীর্থ তাসকিন এসে তাকে আলিঙ্গনের অপেক্ষায়। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলেন। এ যেন অনন্তের অপেক্ষার সমাপ্তি! সাকিব, হৃদয় প্রথম ওয়ানডেতে যা পারেননি, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বড় সুযোগ পেয়েও লিটন, শান্ত হাতছাড়া করছেন। মুশফিক সেই মঞ্চে সেঞ্চুরির ফুল ফোটালেন। সুবাসিত হলো বাংলাদেশের ইনিংস।
আগের ম্যাচে ওয়ানডে সংস্করণের নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সিলেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস লিখল তামিম ইকবালের দল। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় ৩৪৯ রান করে টাইগাররা। দলের রেকর্ড সংগ্রহের নায়ক মুশফিকুর রহীম। ৬০ বলে ১৪ চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। যা বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।


সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আঁটসাঁট বোলিংয়ে বাংলাদেশের দুই ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাসকে আটকে রেখেছিলেন আয়ারল্যান্ডের দুই পেসার মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হুম। প্রথম চার ওভারে মাত্র পাঁচ রান তুলতে পারেনি তামিম ও লিটন। পঞ্চম ওভারে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার-প্লের শেষ বলে দলীয় ৪২ রানে রান আউট হন তামিম। চারটি চারে ৩১ বলে ২৩ রান করেন তিনি।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে দলের হাল ধরেন লিটন। ২০তম ওভারে ১০০ রান পায় বাংলাদেশ। পরের ওভারের প্রথম বলে ছক্কায় ওয়ানডেতে অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা লিটন শেষ পর্যন্ত ৭১ বলে তিনটি করে চার ও ছয়ে ৭০ রানে পেসার কার্টিস ক্যাম্পারের বলে বিদায় নেন। এই ইনিংসেই ওয়ানডেতে দুই হাজার রান পূর্ণ করেন লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ৯৬ বলে ১০১ রান যোগ করেন।
উইকেটে এসে ভালো শুরু করেও হিউমের প্রথম শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন সাকিব আল হাসান। সাকিবের সাথে ৩৯ রানের জুটি গড়ার পথে ৫৯ বলে ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেন শান্ত। লিটনের মতো ইনিংস করার চেষ্টা করেও ৭৩ রানেই থামেন শান্ত। হিউমের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ৭৭ বল তিনটি চার ও দু’টি ছয়ে নিজের ইনিংস সাজান। ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৯০ রানে জুটি বাঁধেন তৌহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহীম। দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে মারুমুখী ব্যাট করতে থাকেন তারা। ৪৩তম ওভারে ছক্কায় ৩৪ বলে ওয়ানডেতে ৪৪তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ছয় নম্বরে নামা মুশফিক।
মুশফিক পারলেও অর্ধশতক হাতছাড়া করেন হৃদয়। অ্যাডায়ারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৩৪ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে ৪৯ রানে আউট হন হৃদয়। পঞ্চম উইকেটে ৭৮ বলে ১২৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের স্কোর ৩০০ পার করেন মুশফিক-হৃদয়। দলীয় ৩১৮ রানে হৃদয় ফেরার সময় মুশফিকের রান ছিল ৪৬ বলে ৭৮। সেঞ্চুরি পেতে ইনিংসের শেষ চার বলে ৯ রান দরকার পড়ে মুশফিকের। তৃতীয় থেকে পঞ্চম বলে একটি চারে ৮ রান নেন মুশফিক। শেষ বলে এক রান নিয়ে ওয়ানডেতে নবম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। ৬০ বলে তিন অঙ্কে পা দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন মুশফিক। ২৪৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই প্রথম ছয় নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক।
মুশফিকের ৬০ বলে অপরাজিত ১০০ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ৩৪৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটি সর্বোচ্চ দলীয় রান টাইগারদের। মুশফিকের ইনিংসে ১৪টি চার ও দু’টি ছক্কা ছিল। এই ইনিংস খেলার পথে সাত হাজার রানও পূর্ণ করেন মুশি। বল হাতে আয়ারল্যান্ডের হিউম তিন উইকেট নেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement