২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কমে যাচ্ছে ব্যাংক মুনাফা

নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েও ঋণ আদায় বাড়ছে না
-

ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে সুদহারের ছাড়। নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না এক ধরনের সক্ষম গ্রাহক। আবার বড় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। কিন্তু ওই অর্থও ফেরত দিচ্ছে না। এ দিকে ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশের বেশি আদায় করা যাবে না।
অন্য দিকে মূল্যস্ফীতির চাপে গ্রাহক আর আগের মতো সঞ্চয় করতে পারছেন না। বিদ্যমান আমানত অনেকেই ভেঙে খাচ্ছেন। এতে আমানত প্রবাহ কমে গেছে। আর এ কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনা চাপে পড়ে গেছে। এ চাপ সামলাতে তহবিল সংস্থান ব্যয় বেড়ে গেছে। সবমিলে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার হার কমে যাচ্ছে। অনেকেই মুনাফার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা তো দূরের কথা, সম্ভাব্য লোকসান ঠেকানো নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

কথাগুলো বলছেন দেশের প্রথম জেনারেশনের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে ছিল। কিন্তু সরকার ঘোষণা অনুযায়ীই মূল্যস্ফীতি যেখানে ৯ শতাংশের কাছাকাছি উঠেছে, সেখানে আমানতের সুদহার গ্রাহকের কাছে ৬ শতাংশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। আর এ কারণেই ঘাটতি মেটাতে অনেকেই আমানত ভেঙে খাচ্ছেন। আবার ঋণের অর্থও কাক্সিক্ষত হারে ফেরত আসছে না। এতে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান তহবিল সঙ্কট কাটছে না। আর এ তহবিল সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নানা ধরনের দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। এ সুযোগে আপদকালীন সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ধার দেয় তার সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ঋণের সুদহার যেখানে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিতে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬ শতাংশ আর বিশেষ রেপোর মাধ্যমে ধার করতে ব্যয় করতে হয়েছে গত বৃহস্পতিবারে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। আবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকেও কাক্সিক্ষত হারে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। ১৬ মার্চ এক দিনের জন্য ধার নিতে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ, চার দিনের জন্য ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং সাত দিনের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হয়েছে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। এতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা যে সামনে কমে যাবে এটা নিশ্চিত। অনেককেই লোকসানে পড়তে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের পার্থক্য বা ব্যাপ্তি কমে নেমেছে ২.৯৫ শতাংশ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তা ১.১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি যেখানে হয়েছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ সেখানে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে প্রকৃত আমানত হিসেবে নিলে তা ঋণাত্মক হয়ে যাবে। কারণ বিদ্যমান যে পরিমাণ আমানত রয়েছে তার সাথে বছর শেষে ৬ শতাংশ আমানতের সুদহার হিসেবে নিলে প্রকৃত আমানত ঋণাত্মক হয়ে যায়। আমানত কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। বলা চলে সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু সরকারের হিসেবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। অথচ আমানতের সুদহার ছিল ৬ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার ২০২০ সালের এপ্রিলে থেকে এক অংক অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেই থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। আর এ ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়। মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে এখন সাধারণ আমানতকারীরা ব্যাংকে নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছেন না। বরং বিদ্যমান আমানত ভেঙে খাচ্ছেন। এ কারণেই আমানতের প্রবাহ কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে আমানতের সুদহার অনেক ব্যাংক বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বিবেচনায় নিয়ে তা বেশি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে অনেক ব্যাংক তা ৮ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। কিন্তু ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ থাকায় প্রকৃত মুনাফা কমে যাচ্ছে। এভাবেই ব্যাংকগুলো চাপে যাচ্ছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

এদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে মানুষ অভাবের তাড়নায় ব্যাংক থেকে আমানত তুলে ভেঙে খাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমানতের ওপর। এরই মধ্যে আমানত কমে গেছে। আমানত প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ছিল, তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি যেটা হবে, আমানতের সুদহার তার চেয়ে কম হবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। এমন প্রেক্ষাপটে শুধু ভোক্তা ঋণের ওপর বিদ্যমান ৯ শতাংশ ঋণ সুদহারের সাথে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বেশি সুদ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে দিলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এখনো লিখিতভাবে দেয়া হয়নি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমানতের সুদহার বাড়ানো হলে আমানত প্রবাহ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আপত্তি হয়ে দাঁড়ায় ব্যবসা ব্যয়। আমানতের সুদহার কাক্সিক্ষত হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশই বহাল রয়েছে।

সরকার এক সাথে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সাথে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর প্রতি ডলার পেতে যেখানে ৮৬ টাকা ব্যয় করতে হতো, এখন আমদানিতে ১১০ টাকা ও এর বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সাথে রয়েছে রশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আবার ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। স্টিল, সিরামিকসসহ বেশ কিছু শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বলা চলে গত কয়েক মাস ধরে বন্ধই রয়েছে। সব মিলেই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-ব্যয় আকাশমুখী হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেকেরই লোকসানের ধকল সামলাতে না পেরে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেক ভালো উদ্যোক্তাও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের কারণে অনেক সক্ষম উদ্যোক্তাও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে এক ধরনের অনীহা দেখাচ্ছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ওই ঋণ আবার নানা কৌশলে নিয়মিত রাখছেন, পরিশোধ করছেন না। সবমিলেই ঋণ আদায় কমে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একদিকে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অপরদিকে আদায় কমে যাওয়ায় ও ঋণের সুদহার নির্ধারিত সীমার মধ্যে ধরে রাখায় মুনাফা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে সামনে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেটুকু মুনাফা হবে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তার বড় একটি অংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতেই ব্যয় হয়ে যাবে। এটা ব্যাংকের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না বলে তারা মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী

সকল