১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শত কোটি টাকা ব্যয়েও কমছে না মশার উৎপাত

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো অভিযানেই সুফল আসছে না। রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে তোলা ছবি : নাসিম সিকদার -

গরমের শুরুতেই রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাতের পাশাপাশি দিনেও মশার উৎপাত চলছে। বাসা-অফিস থেকে সর্বত্রই চলছে মশার যন্ত্রণা। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট কোনো কিছু দিয়েই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর রাতে মশারি ছাড়া ঘুমানোর কথা চিন্তাও করতে পারছে না ঢাকাবাসী। মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন এবার শত কোটি টাকা বাজেট রেখেছে। কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছেনা নগরবাসীর।

রাজধানীতে সারা বছরই মশার অত্যাচার চলে। খুব কম সময়ই মশা থেকে নিষ্কৃতি মেলে। মাঝে মাঝে কিছুটা কমলেও একেবারে বন্ধ থাকে না। ফলে কী শীত কী গরম সব সময়ই ঢাকার বাসিন্দাদের মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত খাল-নালার দুর্গন্ধময় পানি এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। বর্তমানে বৃষ্টি না থাকায় খাল-নালায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ বেড়েছে। বেড়েছে পানির ঘনত্ব। এ কারণে সিটি করপোরেশন খাল-নালায় যে তরল ওষুধ প্রয়োগ করে তা সব জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না। এতে বর্তমানে মশার উপদ্রব বেড়েছে অনেক। অভিজাত এলাকা থেকে নিয়ে বস্তি এলাকা- রাজধানীর এমন কোনো স্থান পাওয়া যাবে না যেখানে মশার উপদ্রব নেই। কিছুদিন আগে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব থাকলেও বর্তমানে বেড়েছে কিউলেক্স মশা।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকায় সবসময়ই মশা থাকে। কখনো সখনো কিছুটা কমলেও বেশির ভাগ সময়ই মশার উৎপাতের শিকার হতে হয়। বর্তমানে মশার অত্যাচার অনেক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন চার দিকে শুধু রোগ আর রোগ। আর মশা থেকে ডেঙ্গু হয়। যাতে মানুষ মারাও যায়। ফলে এখন এডিস মশা না থাকলে নতুন কোনো রোগ হয় কি না তা নিয়েও আশঙ্কায় থাকতে হয়।

মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা শায়লা পারভীন বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন মাঝে মাঝে বিকেল বেলা স্প্রে করে যায়। ওই দিন মশার অত্যাচার কিছুটা কম থাকে। কিন্তু পরদিন থেকেই আবার একই অবস্থা। মশা থেকে কি আমাদের মুক্তি মিলবে না- এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের অভিযান, জরিমানা, মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টির কাজ অব্যাহত আছে।

মশা নিধনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কেবল কীটনাশকের জন্য ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া এবার মশক নিধনে ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্য দিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেখানে মশার ওষুধ বাবদ ৪০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে চার কোটি টাকা, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২৫ কোটি টাকা এবং মশক নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা মারতে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এত টাকা বরাদ্দ করেও নগরবাসীকে মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন।

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে খাল, ড্রেন ও জলাশয়ে গাপ্পি মাছ, তেলাপিয়া মাছ ও হাঁস ছেড়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎপত্তিস্থল খোঁজা ও ওষুধ ছিটানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারছে না মশা। সর্বশেষ ডিএনসিসির মেয়রের নেতৃত্বে একটি বিশাল টিম সম্প্রতি আমেরিকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। যাতে মশার ওষুধ প্রয়োগের ভুল ধরা পড়েছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমরা বছরের ৩৬৫ দিনই সব এলাকায় একই ওষুধ একই মাত্রায় ছিটাই। এ জন্য মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে আগে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা হয়। তারপর ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমাদের কাজ হবে ল্যাবে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা এবং আচরণ গবেষণা করে ওষুধ প্রয়োগ করা। তবে ল্যাব প্রতিষ্ঠা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় ডিএনসিসি এখনো আগের নিয়মেই ওষুধ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। ফলে মশার উপদ্রব কমছে না। ডিএনসিসি বর্তমানে মশক নিধন কর্মী ও মশক সুপারভাইজারদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে বলেও জানা যায়।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: শামসুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি খালের কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রয়োগ করা ওষুধে কোনো সমস্যা নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, শুধু অভিযান পরিচালনা করে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। গাপ্পি মাছও কাজ করে। কিন্তু এটির ব্যবহার সঠিকভাবে হয়নি বলে তিনি জানান। বছরব্যাপী বিজ্ঞানভিত্তিক কাজ করলে ধীরে ধীরে মশার উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন এ কীটতত্ত্ববিদ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল