২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মহাসড়কে গার্মেন্ট পণ্য চুরি বন্ধ চায় বিজিএমইএ

-


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গার্মেন্ট পণ্য চুরি বন্ধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং আইনের কঠোর প্রয়োগসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাক খাতে আইনশৃঙ্খলা-জনিত বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই হাজারের বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রফতানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করছে একটি চক্র। ২০২২ সালে প্রায় ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে আমি সাম্প্রতিক একটি ঘটনা তুলে ধরছি। গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারককে জানানো হয় বেশির ভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। সেবার প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনা জানানো হলে এই চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার ও চুরি করা পণ্য জব্দ করা হয়। চক্রের প্রধান হোতা গডফাদার শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানান, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করেন। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের চুরির অভিযান চালায়।
তিনি আরো বলেন, শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্ট পণ্য চুরির জগতে আরো মাস্টারমাইন্ড ও চক্র রয়েছে। যারা একই কাজ করছে। পরবর্তীতে ধরা পড়লেও প্রায়ই কোনো শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।


ফারুক হাসান বলেন, মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরি রফতানিকারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পের চুরি রোধে বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব ও ডিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থা একাধিক চক্রকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু চুরির মামলা হওয়ায় আইনের দুর্বলতার কারণে চোর চক্র ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর আবার একই কাজ করতে থাকে।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অসৎ কর্মচারীরা এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত, যারা চক্রগুলোর সাথে যোগসাজশ করে পোশাক শিল্পের রফতানি পণ্য লোপাট করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এ ছাড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। এ ব্যাপারে যেন কাউকে কোনো ছাড় দেয়া না হয়।
মহাসড়কে পোশাক চুরি রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সেগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। মহাসড়কে গার্মেন্ট পণ্য চুরির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কিছু নামসর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। স্টকলট রফতানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রফতানির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে। কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারদের ডেটাবেইজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য হস্তান্তর করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement