২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লণ্ডভণ্ড তুরস্ক-সিরিয়া

৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু ২৩৫০, ছাড়াতে পারে ১০ হাজার
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকার (ইনসেটে) উদ্ধার অভিযান : আলজাজিরা -

ভোর রাতের শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বড় একটি অংশ। গত রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া খবরে প্রতিবেশী এ দুই দেশে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩৫০ এর বেশি। আহত ও নিখোঁজ অগণিত। প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে লাশের সংখ্যা। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে তিন হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। এখনো অসংখ্য মানুষ ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছেন। চার দিকে কেবল ধ্বংসস্তূপ আর বাঁচার জন্য চিৎকার। নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। হতাহতের সংখ্যা তুরস্কেই বেশি। শুধু তুরস্কেই অন্তত ১ হাজার ৭১৮টি বহুতল ভবন বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। কয়েক মিনিট পর আবারো একাধিক আফটার শক হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। এর গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটারে। ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে সাইপ্রাস ও লেবাননেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে তুরস্কে। এ ছাড়া প্রথম কম্পনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ছিল খারমানমারাসের শহরের কাছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সর্বশেষ ভূমিকম্পও দামেস্কতে অনুভূত হয়েছে। মার্কিন সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫ মাত্রার। এদিকে তীব্র শীতল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চারদিকে তুষার এবং বৃষ্টি, সাথে তীব্র শীত। আবহাওয়া উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিকদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে। খবর আলজাজিরা, আনাদোলু, বিবিসি, সিএনএনের।
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে গতকালের ভূমিকম্পকে ওই অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে মত দিচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদদের কেউ কেউ। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূতত্ত্ববিদ স্টিভেন হিসকের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ৮০ বছর আগে এর সমান শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প দেখেছিল তুরস্ক। ১৯৩৯ সালের সেই ভূমিকম্পেরও মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮; তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই ভূমিকম্প অন্তত ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
লাশের সংখ্যা বাড়ছেই : তুরস্কের গাজিয়ানতেপের কাছে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটিতে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান গতকাল টেলিভিশন ভাষণে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি ১৯৩৯ সালের পর থেকে তুরস্কের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আহতদের সংখ্যাও পাঁচ সহস্রাধিক বলে তিনি জানান। এতে ২৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৪৫টি দেশ তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
সিরিয়ায় হাজারের কাছাকাছি মৃত্যু ছাড়াও সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স। হতাহতদের বেশির ভাগই আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশের বাসিন্দা বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আরো অন্তত ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে বিদ্রোহীদের উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেট টুইটারে জানিয়েছে।
প্রবল শীতের মধ্যে ভোরে হওয়া এ ভূমিকম্পের সময় অঞ্চলটির অধিকাংশ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। ইউএসজিএস জানিয়েছে, প্রথম কম্পনের পর থেকে পরবর্তী ঘণ্টাগুলোতে অন্তত ২০টি কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ছিল বলে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া থেকে শুরু করে ভূমিকম্পটি দক্ষিণে রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিসÑ এই ১০টি শহর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চার পাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, লেবাননের রাজধানী বৈরুত এবং বন্দর শহর ত্রিপোলিতে ভূমিকম্পের কারণে লোকজন দৌঁড়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়, তাদের ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে আশঙ্কায় কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি সেখান থেকে সরিয়ে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা না যেতেই ফের শক্তিশালী ভূমিকম্প : প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের ১২ ঘণ্টা হতে না হতেই তুরস্ক-সিরিয়ায় আবারো আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ভূকম্পন। তুরস্ক জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে এ ভূমিকম্প। সিরিয়া জানিয়েছে, নতুন ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল দামেস্ক শহরও।
ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্রে (ইএমএসসি) জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের কাহরামানমারাস থেকে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্বে এবং কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার গভীরে। অবশ্য তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ এবং কেন্দ্র ছিল আরো কিছুটা গভীরে।
বিরূপ আবহাওয়ায় ব্যাহত উদ্ধার : এ দিকে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে উদ্ধারকাজ পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে আবহাওয়া। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা অঞ্চলটিতে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। ইস্তানবুল থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেওগলু বলেছেন, তীব্র শীতল আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। চার দিকে তুষার এবং বৃষ্টি, সাথে তীব্র শীত। আবহাওয়ার পরিস্থিতি ও জলবায়ু উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিকদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে। মনে হচ্ছে এটিই সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
লেবাননের বৈরুত থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক জেইনা খোদর বলেছেন, উত্তর সিরিয়ায় বড় ধরনের ঝড় আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, এখানে শীত। অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তারা উন্মুক্ত স্থানে। এমনিতেই উত্তর সিরিয়ায় লাখো মানুষের বাড়ি তাঁবু। ফলে এটি এমন এক জরুরি পরিস্থিতি তা সহজে মোকাবেলা সম্ভব নয়। সিরিয়ার ইদলিব শহরের আলা নাফি ভূমিকম্পকে খুব ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্কজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ঘুম ভাঙার পর পুরো ভবনকে দুলতে দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অনুভূতি। এটি ভুলতে পারছি না সহজে। তিনি আরো বলেন, শীতের মধ্যে মানুষ সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় কাঁদছে দেখা ছিল হৃদয়বিদারক।
নিহত ছাড়াতে পারে ১০ হাজার : তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বেড়েই চলছে প্রাণহানি। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে মার্কিন সংস্থা ইউএসজিএস। তারা বলছে, নিহতের সংখ্যা ১০ হাজারে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে ৪৭ শতাংশ। এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আগের ইতিহাস, জনসংখ্যা, কম্পন এবং ভবনের অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এমন ধারণা করেছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থাটি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কে ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ যেসব অবকাঠামোয় বসবাস করে তা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এবারের আঘাতে এক শ’ থেকে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এমন ভূমিকম্প আগে একবারই ঘটে : তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় এই ভূমিকম্প যে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে, সেটিই ওই অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মত দিচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদদের কেউ কেউ। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূতত্ত্ববিদ স্টিভেন হিসকের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, ৮০ বছর আগে এর সমান শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প দেখেছিল তুরস্ক। ১৯৩৯ সালের সেই ভূমিকম্পেরও মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮; তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই ভূমিকম্প অন্তত ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ২০২০ সালে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটির এলাজিগ এলাকায়। সে ঘটনায় ৪১ জন নিহত এবং ১৬০০ মানুষ আহত হয়েছিল।
চার দিকে ধ্বংসস্তূপ আর বাঁচার চিৎকার : ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছেন অনেকে। এসব অসহায় মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধারকারীদের সাথে সাহায্য করতে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষও। তাঁদেরই একজন তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ারবাকিরের বাসিন্দা মুহিতিন ওরাক্কি। রয়টার্সের কাছে তিনি বর্ণনা করেন সেখানকার পরিস্থিতি। ৩০ বছর বয়সী ওরাক্কি বলেন, ‘সর্বত্র চিৎকার শুনছিলাম। আমি নিজেই পাথর সরাতে শুরু করি। আমরা বন্ধুরা মিলে আহতদের বের করে আনি, কিন্তু চিৎকার থামছিল না। পরে উদ্ধারকারী দল আসে।’ ধ্বংসস্তূপে তার পরিবারের সাত সদস্য চাপা পড়েছেন বলেও জানান ওরাক্কি। তিনি বলেন, ‘আমার বোন এবং তার তিন সন্তান ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। সেই সাথে বোনের স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িও।’
হঠাৎ ভয়ানক ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙে গাজিয়ানটেপের বেশির ভাগ বাসিন্দার। তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলের আদানা শহরের বাসিন্দা নিলুফার আসলান বলেন, ‘যখন আমাদের পাঁচ তলার অ্যাপার্টমেন্ট অনেক জোরে কেঁপে ওঠে, আমি ভেবেছিলাম পরিবারের সবাই মারা যাব। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদের ডেকে বলি, মরতেই যখন হবে, চলো সবাই একসাথে মরি।’ ভূমিকম্প থামলে, আসলান বাইরে ছুটে যান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সাথে কিছু নিতে পারিনি, একেবারে খালি হাতেই বের হই। এরপর দেখি আমার ভবনটির চার পাশের চারটি ভবন ধসে পড়েছে।’
তুরস্কে এত ভূমিকম্প কেন হয় : বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল তুরস্ক। কারণ দেশটি বেশ কয়েকটি ফল্ট লাইনের কাছাকাছি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তুরস্কের বেশির ভাগ অংশ আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটে অবস্থিত। এটি আবার দু’টি প্রধান প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। প্লেট দু’টির মধ্যে একটি ইউরেশিয়ান ও আফ্রিকান এবং অপরটি আরবিয়। এই বড় দু’টি প্লেট স্থানান্তরিত হওয়ার সময় মূলত শক্তিশালী ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে এবং তুরস্ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুরস্কের জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দেশটিতে গত বছর ২২ হাজারেরও বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। সুতরাং তুরস্কের মানুষের কাছে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এর আগে ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ইজমিট শহরে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন সংগঠনের শোক
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কয়েক হাজার লোক নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক : তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।
গত সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং বেশ কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।
উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৪৫টি দেশ উদ্ধারকাজে তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী : দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক শোকবাণীতে বলেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কয়েক হাজার লোক হতাহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়েছে। ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও নাগরিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, আমি তুরস্ক ও সিরিয়ার এ ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতদের রূহের মাগফিরাতের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি এবং তাদের পরিবার-পরিজন ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করছি শিগগিরই যেন তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করেন। আমরা আশা প্রকাশ করছি, তুরস্ক এবং সিরিয়ায় জনগণ এ শোক ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সহজেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
খেলাফত মজলিস : তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরপর দু’বার বড় ধরনের ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী ও মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের। শোকবাণীতে নেতৃদ্বয় ভূমিকম্পে নিহত সকল মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য খেলাফত মজলিস নেতারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। সামর্থ অনুযায়ী ভাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশ দু’টির দুর্দিনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও খেলাফত মজলিস নেতারা উদাত্ত আহ্বান রাখেন।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন : সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহু মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। শোকবার্তায় নেতারা আল্লাহ তায়ালার কাছে নিহত ব্যক্তিদের রূহের মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। নেতারা দুর্যোগকালীন মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের জন্য তুরস্ক-সিরিয়া সরকারের পাশাপাশি বিশ^ নেতাদের এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত

সকল