২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অদ্ভুত উপায়ে কমানো হচ্ছে খেলাপি ঋণ

আইএমএফের শর্ত পূরণ
-

নানা উপায়ে কমে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ। এক ব্যাংকের আদায়-অযোগ্য খেলাপি ঋণ আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। আবার বড় বড় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপের খেলাপি ঋণ পুনঃঅর্থায়ন ও নবায়নের মাধ্যমে নিয়মিত করা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিলের মাধ্যমে ঋণ অবলোপন করে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করা হবে। এভাবেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে খেলাপি ঋণ কমানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। আগামী ছয় মাস পর দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণের জন্য বেশ কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। আর এর অন্যতম হলো খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনতে হবে। বলা হয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে যা ২০ শতাংশের ওপরে। অপর দিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে যা ব্যাংকভেদে ২০ শতাংশের ওপরে আছে কোনো কোনো ব্যাংকের। আগামী জুন থেকেই এগুলো দৃশ্যমান করতে হবে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। এর মধ্যে আগামী জুনের মধ্যেই ঋণ পুনঃতফসিল করা ও খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংকের খারাপ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। একই সাথে ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।

ব্যাংকাররা জানান, রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়। কারণ, এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে চলমান ঋণই পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এরওপর পুরনো ঋণ পরিশোধ করা তো দুষ্কর। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ কমানো তো দূরের কথা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হলে অর্থাৎ নীতিসহায়তা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে ৫ লাখ পর্যন্ত মন্দ মানের খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে মামলার প্রয়োজন হবে না। সাধারণত মন্দ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করার আগে মামলা করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিথিল করা হযেছে। এর ফলে সহজেই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মন্দ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন হয়ে যাবে। আর অবলোপন করা হলে আদায়-অযোগ্য এ খেলাপি ঋণের হিসাবে খেলাপি ঋণের প্রতিবেদনে দাখিল করা হয় না। আলাদা হিসাবে রাখা হয়। এ ভাবে বড় অঙ্কের একটি খেলাপি ঋণ, আদায় না করেই খেলাপি ঋণের হিসেবে প্রদর্শিত হবে না। এতে আদায় না করেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র জানিয়েছে, বহুল আলোচিত বড় অঙ্কের কিছু খেলাপি ঋণ অন্য ব্যাংক কিনে নিচ্ছে। যেমন, জনতা ব্যাংকের বহুল আলোচিত এনন টেক্স, ক্রিসেন্টের মতো মন্দ মানের বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ একটি ইসলামী ব্যাংক কিনে নিচ্ছে। মন্দ মানের খেলাপি ঋণ কিনে নিলে এক দিকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে যায়, অপর দিকে, যে ব্যাংক কিনে নেবে ওই ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও বেড়ে যায়। আপাতত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমলেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হলে ওই ঋণ আবারো খেলাপি ঋণের খাতায় যুক্ত হবে।

অপর দিকে বহুল আলোচিত কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপের ঋণ নিজ ব্যাংকে নানা কৌশলে নিয়মিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যেমন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে না। ওইসব ঋণ পুনঃঅর্থায়ন করে বা নতুন ঋণ সৃষ্টি করে পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট্ সূত্র জানিয়েছে। এভাবেই ঋণ আদায় না করেই খেলাপি ঋণের একটি অংশ কমে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশের বেশি। এক বছর আগে ছিল এক লাখ এক হাজার ১৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে আদায়-অযোগ্য ঋণ হচ্ছে এক লাখ ১৮৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ এসব ঋণ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে খেলাপি হয়ে আছে। এগুলো থেকে ব্যাংকঋণ আদায় করতে পারছে না। মোট ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৫ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩৩টি ব্যাংকের। এসব ব্যাংক নিয়ে তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু ২৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশের ওপরে। এগুলোর মধ্যে ৭টি সরকারি ব্যাংক। এগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে। কারণ কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশও রয়েছে। বেসরকারি খাতের ২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশের ওপরে। এগুলোর খেলাপি ঋণও ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। ২০টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আছে ৫ শতাংশের ওপরে কিন্তু ২০ শতাংশের নিচে। এগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে ৫ শতাংশে নামাতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement