২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইএমএফ শর্তে তিন বছরে রাজস্ব বাড়াতে হবে ২,৩৪,০০০ কোটি টাকা

-


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে হলে আগামী তিন বছরে এনবিআরকে অতিরিক্ত দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আইএমএফ শর্ত পূরণ করতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে।
রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট গতকাল সোমবার পিআরআই কার্যালয়ে ‘পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রসঙ্গত, এ শর্ত মানতে হলে করহার বৃদ্ধিসহ করের আওতা বাড়াতে হবে। আর এতে করে চাপে পড়বে আপামর জনগোষ্ঠী।


অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক।
পিআরআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, আইএমএফের শর্ত মেনে ২০২৪, ২০২৫ এবং ২০২৬ অর্থবছরে বাজেটের মূল রাজস্ব আদায়ের সাথে অতিরিক্ত আরো ২৩৪০ বিলিয়ন টাকা বা ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।


শর্ত অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। তবে অর্জন না করে উপায় নেই।
গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক জানান, আইএমএফের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে শর্ত অনুযায়ী জিডিপিতে করের অবদান সাত দশমিক ৮ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক তিন শতাংশ, ২০২৫ অর্থবছরে ৮.৮ শতাংশ এবং ২০২৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নতি করতে হবে। এর পরের বছরগুলোতে এই আয় আরো বাড়াতে হবে বলে মনে করছে পিআরআই। তারা রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফের পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়া গেলেও বাজেটের আগে ধাপে ধাপে তা আসবে। তবে আইএমএফের চাপে নয়; বরং নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতেই এই সংস্কার করা প্রয়োজন।


পিআরআই পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, উচ্চমধ্যম দেশে পরিণত হওয়ার জন্য সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সাল শেষে কর-জিডিপির অনুপাত সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। সুতরাং আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অনুযায়ী সরকার যদি শর্ত পূরণ করে তারপরও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর লক্ষ্য অর্জন হবে না। তাই শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের স্বার্থেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব বাড়াতে হবে।
মনসুর বলেন, দেশে বর্তমানে জিডিপির তুলনায় যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয় তা বিশে^র অধিকাংশ দেশের থেকেই কম। রাজস্ব আহরণ হয় না তাই সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে পারে না। তাই অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে করছাড় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে রাজস্ব বাড়ানো যায়। এ ছাড়া দেশে আয়কর দিতে সক্ষম এমন প্রতিটি মানুষকে করের আওতায় আনা গেলে জিডিপির আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। তাই এ বিষয়ে এনবিআরকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই সাথে করপোরেট কর থেকে আরো রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। করছাড় প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন ঢালাওভাবে ছাড় প্রত্যাহার করা যাবে না। তবে কি পরিমাণ ছাড় দেয়া হচ্ছে তা নির্ধারণ করে প্রতিটি বাজেটে উপস্থাপন করা উচিত। একই সাথে যেসব জায়গায় ছাড় প্রত্যাহার করা সম্ভব সে জায়গাগুলোতে ধীরে ধীরে ছাড় কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন তিনি।


রাজস্ব বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিডিপির তুলনায় দশমিক ৫০ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশি মনে না হলেও বিদ্যমান রাজস্বকাঠামোতে এটি অর্জন করা খুবই কঠিন। অন্যান্য দেশের বিভিন্ন খাতে করহার কম থাকায় প্রয়োজন হলেই তারা সেটি বাড়াতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যমান করহারের পরিমাণই বেশি। তাই এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার ও মানসিকতা বদল করা না গেলে আইএমএফের শর্ত মেনে রাজস্ব খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে তিনি শঙ্কা ব্যক্ত করেন।
এম এ রাজ্জাক তার উপস্থাপনায় বলেন, রাজস্ব খাতের ক্ষেত্রে আইএমএফের সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জের হবে। তবে এটা অসম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে। তবে সব ছাপিয়ে যে আলোচনা এখন প্রাধান্য পাবে, তা হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৬৫০ বিলিয়ন বা ৬৫ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে।


পিআরআই গবেষণা পরিচালক আরো বলেন, এর পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে সমাপ্ত বছরে বর্তমান বছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে এক হাজার ৩৮৩ বিলিয়ন টাকা বা এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি কোটি টাকা। আইএমএমের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর, অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতিরিক্ত আরো দুই হাজার ৩৪০ বিলিয়ন টাকা বা দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement