২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্ষপূর্তিতে বড় হামলা চালাতে পারে রাশিয়া

-


-নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি
-ইউক্রেনকে আয়রন ডোম অ্যান্টি-মিসাইল দিচ্ছে ইসরাইল

ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক আয়রন ডোম অ্যান্টি-মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করার কথা ভাবছে তেলআবিব। রোববার ফরাসি এলসিআই চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ কথা বলেন। আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স, এএফপি।
তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পূর্ববর্তী ইসরাইলি সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমি এই সমস্যাটি নিয়ে ভাবছি এবং আশা করছি সবচেয়ে ভালোভাবে বিষয়টির উত্তর দিতে পারব। এ সময় তিনি অবশ্য বলেন, এ ক্ষেত্রে ইসরাইলকে তার বিকল্পগুলো নিয়েও পর্যালোচনা করতে হবে এবং এই অঞ্চলে তার স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সহায়তা অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও হতে পারে। বিষয়টির ব্যাখ্যায় নেতানিয়াহু জানান, ইসরাইল ইউক্রেনকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে শুরু করে। পরে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশই তাদেরকে সামরিক সহায়তা দিয়ে রাশিয়াকে মোকাবেলায় সাহায্য করে। কিন্তু ইসরাইলের তৎকালীন সরকার ইউক্রেনকে মানবিক সহায়তা দিলেও সামরিক কোনো সহায়তা দিতে রাজি হয়নি। সম্প্রতি ইসরাইলে নতুন সরকার আসার পর বিষয়টি আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে।


এ দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা বলেছেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে ইসরাইলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতের মন্তব্য ‘কাল্পনিক’। রোববার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়, বেনেত দাবি করেন, জেলেনস্কিকে হত্যা না করার ব্যাপারে পুতিন নিশ্চয়তা দিয়েছেন। টুইটারে জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেন, ন্যাটো সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি বা নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না, বরং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ইউক্রেনকে ধ্বংস এবং ইউক্রেনীয়দের হত্যা করা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বেনেত বলেন, পুতিন তাকে মধ্যস্থতামূলক আলোচনার সময় আশ্বাস দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার হাতে নিহত হবে না।


নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি : যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া দূরপাল্লার অস্ত্র রাশিয়ার ভূখন্ডে আঘাত হানতে ব্যবহার করবে না ইউক্রেন। কেবল অধিকৃত ইউক্রেন ভূখণ্ডে রাশিয়ার সেনা ইউনিটগুলোকে নিশানা করা হবে বলে রোববার জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকজি রেজনিকভ। যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে কিয়েভের জন্য সহায়তা প্যাকেজে নতুন একটি রকেট যোগ করা হচ্ছে। এই রকেট দিয়ে ইউক্রেন দ্বিগুণ দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেজনিকভ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সবসময় সরকারিভাবে আমাদের অংশীদারদের বলি যে, আমরা বিদেশী অংশীদারদের সরবরাহ করা অস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার জন্য ব্যবহার করব না। “আমরা কেবল সাময়িকভাবে ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে রুশ ইউনিটের ওপর আঘাত হানতে এই অস্ত্র ব্যবহার করব।” ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে রাশিয়া হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র যত অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া তত বেশি আক্রমণ করার হুমকি দিয়েছে। এমনকি তা পরমাণু যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হবে। এই এক বছরের যুদ্ধে রাশিয়া উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। বরং গত সাত/আট মাস ধরে সেখানে রুশ বাহিনী উল্টো চাপের মুখে আছে। তাদেরকে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে পরাজয় দেখতে হয়েছে।


বর্ষপূর্তিতে বড় হামলা চালাতে পারে রাশিয়া : ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ মাসেই আবার বড় হামলা চালানো শুরু করবে রুশ সেনারা। মূলত যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘প্রতীকী’ হামলা চালাবে তারা। তবে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার এ হামলা প্রতিহতের সক্ষমতা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার বড় হামলার আশঙ্কা করছি। এটি শুধুই প্রতীকী দিক থেকে। সামরিক দিক থেকে এর কোনো যুক্তিই নেই। কারণ তাদের সেনারা পুরোপুরি প্রস্তুত না। কিন্তু তারা তবুও এ হামলা চালাবে।’


তিনি জানিয়েছেন, হামলাটা মূলত হবে পূর্ব দিকে অবস্থিত দনবাসে। এ অঞ্চল পুরোটি দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে রুশ সেনারা। অথবা হামলা হতে পারে দক্ষিণ দিকের অঞ্চলগুলোতে। যেখান দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের দখলকৃত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সাথে স্থল সংযোগ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের মন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, বর্তমানে বেলারুশে রাশিয়ার ১২ হাজার সেনা অবস্থান করছে। ফলে এ সংখ্যক সেনা দিয়ে ইউক্রেনের রাজধানীর দিকে হামলা চালাতে পারবে না তারা। ফলে রাজধানী কিয়েভ ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে হামলার শঙ্কা নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকোভ আরো জানিয়েছেন, রাশিয়া হামলা শুরুর আগে ইউক্রেন হয়ত পশ্চিমাদের প্রতিশ্রুত সব অস্ত্র পাবে না। কিন্তু বর্তমানে তাদের কাছে যেসব অস্ত্র আছে সেগুলো দিয়েই রাশিয়ার হামলা ঠেকানো যাবে।


প্রশাসনিক পদে রদবদল আনছে ইউক্রেন : এদিকে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রত্যাশিত হামলার আগেই এ পদে রদবদল করা হচ্ছে। রোববার একজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা এ কথা জানান।আইনপ্রণেতা ডেভিড আরাকহামিয়া বলেন, ৩৭ বছর বয়সী সামরিক গোয়েন্দা প্রধান ‘কিরিলো বুদানভ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হবেন। যুদ্ধকালীন সময়ে এটি অবশ্যই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।’ এ আইনপ্রণেতা পরিকল্পিত রদবদলের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট সময়সীমার কথা উল্লেখ না করে বলেন, ইউক্রেনের বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ (৫৬) কৌশলগত শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাবেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দলের প্রধান আরাকহামিয়া আরো বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি নীতি নির্দেশ করে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘সময় ও পরিস্থিতি অনুসারে কার্যক্রম জোরাল করতে হবে। দল পুনর্গঠন করতে হবে। এখন সে কাজ চলছে। ভবিষ্যতেও হবে। শত্রুরা সামনে আগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আমাদের সুরক্ষিত রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’


স্থানীয় এক নিউজ সাইটের সাথে সাক্ষাৎকারে রেজনিকভ বলেন, কৌশলগত শিল্প মন্ত্রণালয়ে তার নতুন নিয়োগের বিষয়ে কিছু তাকে বলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারি যে এটি আমার জন্য একটি নতুন তথ্য। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে কৌশলগত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কে আমার কোনো কথা হয়নি।’
রেজনিকভকে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তিনি পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। তবে তার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি রয়েছে। বর্তমান বাজার দরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে খাদ্য চুক্তি করায় উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। রোববার সকালে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার সময় রেজনিকভ মন্ত্রণালয়ে থাকছেন কিনা, তা স্পষ্ট করেননি। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কেবল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন। নিজের বিবেকের কাছে তিনি পরিষ্কার বলেও জানান।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement