২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিএনপির সমাবেশে ফখরুল

ক্ষমতা দখলে নেবে জনগণ

১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে পদযাত্রা, এরপর লংমার্চ
নয়াপল্টনে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ইনসেটে) : নয়া দিগন্ত -


সরকার পতনের আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ আজ এতটা অসহায় যে, হিরো আলমের কাছেও তাদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ৬০০-৭০০ ভোটে জিততে হয়। তাই এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে। গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একপাশের সড়কে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আয়োজনে। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগীয় শহরে একযোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।


১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার চতুর্থ কর্মসূচি। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
গতকাল রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে। তারাও ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নেতাকর্মীরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পড়ে হাজির হন। কারো কারো হাতে ছিল জাতীয় ও বিএনপির পতাকা।


সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা হবে। ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমরা পদযাত্রা শুরু করব। এরপর ধীরে ধীরে আমরা উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং এরপর তাদের যে ক্ষমতার মসনদ সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে।


এরপর লংমার্চ : মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ধীরে ধীরে চলছি, মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। ঢাকায় ইতোমধ্যে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা সব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে একটা লংমার্চের মধ্য দিয়ে আমরা এদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই। ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আসুন আজকে গ্রামের মানুষকে সাথে নিয়ে ইউনিয়নের মানুষকে সাথে নিয়ে উপজেলা-জেলার মানুষকে সাথে নিয়ে একসাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমরা এগিয়ে চলি, এগিয়ে চলা হবে আমাদের বিজয় ইনশাল্লাহ।


উপনির্বাচন প্রসঙ্গ : সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেলো, সেগুলোতে। আমি সে বিষয়ে যাব না। আমি শুধু বলতে চাই, একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) একটি মাত্র কারণে আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। তার বিরুদ্ধেও তাদের (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জিততে হয় ৬০০-৭০০ ভোটে। তিনি বলেন, আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দলত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কি, সুষ্ঠু হবে কি, আপনারা ভোট দিতে পারবেন? এ সময়ে নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ সূচক স্লোগান দেন। বাজারের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজারের অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৬ টাকা বেড়েছে। মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কী কষ্ট করে তাদের সংসার চালাতে হয়।


আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গ : মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে, আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কিনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়। তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করছে, সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে গরিব-দুস্থ ভাতা দিতো সেই ভাতার টাকা তারা (সরকার) চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে। এই সরকার সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ স্লোগান দিতো ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে, যারা বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এ দেশ লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব, কারাবন্দী রাজবন্দীদের মুক্ত করব।
ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আমাদের ঐতিহ্য সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করেছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, আমাদের ধর্মবোধকে ধ্বংস করছে। এই সরকার দেশকে সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।


ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


কুমিল্লায় ড. মোশাররফ
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, সরকার পাঠ্যপুস্তককে বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ড. মোশাররফ বলেন, এই সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক মহল এই সরকারকে একটি হাইব্রিড সরকার উপাধি দিয়েছে। কিছুদিন আগে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দিনের ভোট রাতে হওয়ার মতো ঘটনা তিনি আর দেখেননি। এই সরকার স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। বাকশাল কায়েম করেছে। গত ১৪ বছরেও তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। কয়েকদিন আগের উপনির্বাচনে পাঁচ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যায়নি। এ থেকে প্রমাণ হয়, যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তাদের পক্ষে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এই সরকার এক লাখের বেশি মামলা করে বিএনপির ৩৭ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি বানিয়েছে। কিন্তু বিএনপি আরো শক্তিশালী হয়েছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল হক সাইদ। এ ছাড়া চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভাপতির বক্তব্যে হাজি আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন বলেন, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন দেশের মানুষের শরীরে গুটি বসন্তের দাগ থাকবে। এই সরকারের গুম এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।


ময়মনসিংহে আমীর খসরু
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে যত অপকর্ম হচ্ছে, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার সবই হচ্ছে শুধু ভোট চুরির জন্য। রাজনীতিতে পরাজিত হয়ে আজকে তাদের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা শুধু ভোট চুরি নয় পুকুর চুরি করছে। তারা আজ বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র্রে পরিণত করছে। বিএনপির শেষ বার্তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে হবে। ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা: মাহবুবুর রহমান লিটন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, সাবেক এমপি নিলুফা ইয়াসমনি মনি, শাহ শহীদ সারোয়ার, সাবেক উপমন্ত্রী সিরাজুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দ।


চট্টগ্রামে নজরুল ইসলাম খান
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি, ভবিষ্যতেও তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চায় না। তারা চায় আবারো ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। তিনি বলেন, আমরা বাকশালের গোরস্থানের ওপর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছিলাম। পরে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছি। এবার আমরা তারেক জিয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। গতকাল বিকেলে নগরীর কাজীর দেউরীস্থ নুর আহম্মেদ সড়কে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা: শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম। উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ।


রাজশাহীতে মির্জা আব্বাস
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অবৈধ আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সারা দেশে খুন, গুম ও জুলুম করছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ আজ নিরুপায়। এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে রাজশাহী নগরীর সোনাদীঘি মোড়ে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব ও কর্নেল (অব:) আব্দুল লতিফ। অন্যদের মধ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও এম ওবায়দুর রহমান চন্দন, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম মার্শাল, সাবেক এমপি জাহান পান্না প্রমুখ নেতা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ মামুন ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকারের সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- নাটোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম বাবু, পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদুর রহমান মাসুম, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জয়পুরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক নান্নু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হাজী রফিকুল ইসলাম রফিকসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ঢাকার গণপদযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী ও নেতারা নানা ধরনের কথা বলছে। আসলে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ তারা জানে ক্ষমতায় না থাকলে তাদের কী অবস্থা হবে। এই ভয়ে তারা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে আবারো গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।


খুলনায় গয়েশ্বর রায়
খুলনা ব্যুরো জানায়, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা, হামলা চালাচ্ছে। এই সরকার পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের সরকারের সব অপকর্মকেও হার মানিয়েছে। চুরি, দুর্নীতি, খুন, গুম এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে এই চুরির টাকা আছে। শোনা যায়, এই টাকার পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকারও বেশি। তিনি গতকাল বিকেলে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের কেসিসি মার্কেটের সামনে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।


খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও নিতাই রায় চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেহেদী আহমেদ রুমী, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-তথ্য সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও সহ-ধর্ম সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু।


রংপুরে মো: শাহজাহান
রংপুর অফিস জানায়, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হলো তারা যা বলে তার উল্টোটা করে, ঠিক তেমনিভাবে তারা শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি করছে দাবি করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, দেশের মানুষের এখন সুস্পষ্ট বার্তা যে, তারা এই সরকারকে আর ক্ষমতায় চায় না। তাদের দাবির প্রতি একাট্টা হয়ে বিএনপি এখন মাঠে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আরো ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত তারা। গতকাল বিকেলে রংপুর মহানগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিভাগীয় গণসমাবেশে এসব মন্তব্য করেন বিএনপি নেতারা। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে এবং মহানগর ও জেলা সদস্যসচিব যথাক্রমে মাহফুজ উন নবী ডন ও আনিছুল ইসলাম লাকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান। বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিকবিয়ষক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জামির, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুষ্ট, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম, বিলকিস ইসলাম, শাহিদার রহমান জোসনা, রংপুর জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামসহ বিভাগের আট জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।


দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন সমাবেশে। গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে শাপলা চত্বর এবং দাবানল মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সড়কে বিছানো কার্পেটে বসে অবস্থান নেন। বন্ধ হয়ে যায় মূল সড়কের এক পাশ। অপর পাশে চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। একপর্যায়ে রাস্তা থেকে মানুষ অবস্থান নেন সেনপাড়া, গুপ্তপাড়া, কামারপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, আদর্শপাড়া, মুলাটোলসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ সময় বক্তব্যে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে।


প্রধান অতিথি মোহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, এ দেশের মানুষ একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে সেটি হলো তারা এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কারণ সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের রাশ টেনে ধরতে পারে না, দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু অভিযোগ করেছেন, আগের রাতে পুলিশ তাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দিয়েছে। চেকপোস্টের নামে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তবে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, মঞ্চ করার কোনো অনুমতি তাদের ছিল না। তবুও তারা মঞ্চ করেই সমাবেশ করেছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement