২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে আলোচনা

প্রতি বছর আক্রান্ত দুই তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে

-


দেশে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু চিহ্নিত হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার, বাকিরা থার্ড স্টেজের ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছেন কিন্তু তখন করার কিছু থাকে না, এদের দৃই তৃতীয়াংশের মৃত্যু হচ্ছে। ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি জোরদার করতে পারলে এত মানুষের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবক্যানের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে মৃত্যু এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হবে। যার মূল ভুক্তভোগী হবে মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষ। এ কারণে ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ত্রিনিংয়ে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সমন্বিতভাবে কাজ করতে না পারলে রোগটি প্রতিরোধে সফলতা আসবে না।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ক্যান্সার ও তামাক বিরোধী জোট।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ঢাকার বায়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত। আর এ কারণে মানুষের ফুসফুস ক্যান্সার হচ্ছে। দূষিত বায়ু ছাড়া আমাদের খাদ্যে ভেজাল, মাছের ও মুরগির খাবারে ক্যান্সার হয় এমন উপাদান মেশানো হয়। সবজিতে বেশি করে কীটনাশক ব্যবহার করায় এখন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার নিরাময়ে সব মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। চিকিৎসকরা বলেন, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মেশিন নষ্ট হলে আমরা আরেকটা কিনে ফেলছি কিন্তু মেশিন ঠিক করার চেষ্টা করছি না।


বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ফুসফুসের ক্যান্সারে নারী-পুরুষ উভয়েই আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি। তারা বলেন, বিষ খাইয়ে মারলে শাস্তি হয় কিন্তু খাদ্যে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর কারণে আমাদের যে প্রাণঘাতী রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে, এ জন্য কাউকে শাস্তি পেতে দেখা যায় না।
নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশে প্রতিদিন ১৮ জন নারী মারা যাচ্ছে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে। অথচ এই ক্যান্সারটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। ৯ থেকে ১৫ বছরের মেয়েদের এইচপিভি টিকা দেয়া নিশ্চিত করা গেলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আমাদের জীবনাচারণ পরিবর্তনের ওপর জোর দেন। ধূমপান, তামাক বর্জন করতে বলেছেন। একই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যান্সার রোগীদের পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি ২৪ ঘণ্টার হটলাইন নম্বর চালু করার কথা বলেন।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় আলোচক ছিলেন বারডেম হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক, ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: রওশন আরা বেগম, গাইনি অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: সাবেরা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা, জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ডা: হালিদা হানুম আখতার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: আবু জামিল ফয়সাল, অধ্যাপক ডা: স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্লিমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমান ময়না, প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম প্রমুখ।
গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল : গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়েছে গতকাল। এ উপলক্ষে দুপুর ১২টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সামনে ক্যান্সার বিভাগ র্যালি ও ধানমন্ডি বিভিন্ন সড়কে প্রচারপত্র বিতরণ করে। উল্লেখ্য, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ক্যান্সার সেন্টারে অল্প খরচে ক্যান্সার চিকিৎসা করা হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাংলাদেশে একমাত্র ইলেকট্রনিক ব্রাকিথেরাপি মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্যান্সার চিকিৎসায় গণস্বাস্থ্যে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, গণস্বাস্থ্যে ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ দেশের যেকোনো হাসপাতালের চেয়ে কম। কেমোথেরাপি ও ক্যান্সারের অপারেশনসহ সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়। কোনো সিরিয়াল বা মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। সরাসরি ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সপ্তম তলায় ক্যান্সার বিভাগে যোগাযোগ করতে বলা হয়। র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: বদরুল হক, অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: খোরশেদ আলম, শিশু ক্যান্সার বিভাগের অধ্যাপক ডা: কর্নেল (অব:) শরমিন আরা ফেরদৌসী প্রমুখ।


প্রতি বছর আক্রান্ত দেড় লাখ মৃত্যু ১ লাখ ৮ হাজার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ‘ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ও যত্নে ঘাটতি অতিক্রম করতে হবে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: রবিউল হোসেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এখনো পরিপূর্ণ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠেনি, তাই আমাদের এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রামে বিশ্ব মানের ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বল্প খরচে রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল। বর্তমানে টেলিহেলথ ব্যবস্থার মাধ্যমে অ্যাপোলো হাসপাতালের অন্যান্য দেশের চিকিৎসকদের সাথে চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা এই অঞ্চলের ক্যান্সার রোগীদের সঠিক রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ, ক্যান্সার রোগীদের অপারেশন কিংবা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি পরবর্তী চিকিৎসা ও চেকআপ চট্টগ্রামেই করা যাবে এবং এতে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সাশ্রয়ী হবে ও ফলো অ্যাপের জন্য বিদেশে যেতে হবে না।
অনুষ্ঠানে ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট ডা: ফাহমিদা আহমেদ। তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব বলছে প্রতি বছর বাংলাদেশে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজারই মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ নানা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে। চিকিৎসকদের মতে জনসচেতনতার অভাবেই ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপদান হলো প্রাথমিক প্রতিরোধ, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। তাই ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এটা কী ধরনের রোগ, কী কী কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধের জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা: আনানথ এন রাও।

 


আরো সংবাদ



premium cement