২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাতাল রেলের যত চ্যালেঞ্জ

পাতাল রেলের যত চ্যালেঞ্জ -


বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড (পাতাল) মেট্রোরেল নির্মাণ হয়েছে অনেক আগেই। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন শহরেও আছে পাতাল মেট্রোরেল। বাংলাদেশেও পাতাল মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, এই কাজ সম্পন্ন করা এত সহজ হবে না। তা ছাড়া নির্মাণপরবর্তী নানা চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাবে এই পাতাল রেল। এমআরটি লাইন-১ হিসেবে চিহ্নিত এই প্রকল্পটির দু’টি অংশ। একটি হলো বিমানবন্দর রুট আর আরেকটি পূর্বাচল রুট।


বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পুরো অংশ হবে ভূগর্ভে। এ অংশে থাকবে মোট ১২টি স্টেশন। অন্য অংশ হবে এলিভেটেড। সেই অংশ নতুন বাজার থেকে কুড়িল হয়ে যাবে পূর্বাচলে। ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটারের এ অংশে থাকবে মোট ৯টি স্টেশন। এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। তবে এই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল’ প্রকল্প ঢাকা শহরের জন্য কতটা উপযোগী বা টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে অপরিকল্পিত ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ঢাকা ইতোমধ্যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। যানজট, জলাবদ্ধতা এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতার বিষয়টি তুলে আনছেন তারা। যদিও এ বিষয়গুলো আগেই যাচাই করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।


‘ঢাকার মাটি নরম’ : মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পাতাল রেল কমবেশি ৩০ মিটার অর্থাৎ ৯০ ফুট মাটির নিচ দিয়ে যাবে। টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে এর নির্মাণকাজ চালানো হবে। তবে মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণকাজ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর আর্থসামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় পাতাল রেল প্রকল্প টেকসই কোনো প্রকল্প নয়। পাশাপাশি তারা এটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক’ বলেও উল্লেখ করছেন।
নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড প্রজেক্টের কাজে কনস্ট্রাকশনের সময় ও তার পরবর্তীতে কার্যক্রম শুরু হবার পরও ঝুঁকিপূর্ণ’। এর বড় কারণ হচ্ছে, যেসব এলাকার নিচ দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে সেসব এলাকায় ভবনগুলো কতটা মানসম্মত সেটি একটি বড় প্রশ্ন।


অধ্যাপক হক বলেন, ভবনগুলো নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না সেটি খুব একটা তদারকি করা হয়নি। ঢাকার ভবনগুলো নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না সেটি দেখার দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের।
‘রাজউক কনস্ট্রাকশনটা করতে পারে না এবং তারা দেখতেও পারে না বিল্ডিংটা কিভাবে করা হলো। বিশেষ করে থার্ড পার্টি যখন বিল্ডিংটা করে অনেক কিছু কম্প্রোমাইজ হয়ে যায়।’
কলকাতার আন্ডারগ্রাউন্ড নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে কলকাতাই প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো করে। ‘তারা একবারই করেছে, ভোগান্তিটা দেখেছে। রাস্তায় ধসও দেখেছে। কোনোভাবে তারা করেছে অনেক উন্নয়ন যন্ত্রণা ও অনেক ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। দ্বিতীয়বারে তারা আর আন্ডারগ্রাউন্ডে যায়নি।’
তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো কনস্ট্রাকশনের ঝুঁকিটা আরো একবার বিবেচনায় আনা উচিত বলে মনে করছেন অধ্যাপক হক।
এ রকম কাজে বাংলাদেশের পারদর্শিতা অনেক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা অন্য বড় প্রকল্প যা আছে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা আমরা ঠিকমতো করতে পারি না। আর মাটির নিচে গর্ত করে আশপাশের সম্পদগুলোকে ঝুঁকির মুখে নিয়ে আসব; এখানে ভাইব্রেশনের যেই প্রভাবটা পড়বে সেটি আমরা কতটা ভেবেছি?’
‘আমাদের মাটির যে রকম অবস্থা- আমাদের নরম মাটি। ভবনগুলো কোনোটাই কিন্তু সেফটি কমপ্লøায়েন্সে করে বানানো হয়নি- রাজউকেরই কিন্তু তথ্য। সেখানে ঢাকার মতো অপরিকল্পিত ঘনবসতিপূর্ণ শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড কনস্ট্রাকশনের ঝুঁকি তো অবশ্যই আছে।’


আরো সংবাদ



premium cement