১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপনির্বাচনে ভোটার ৫ ভাগের বেশি ছিল না : ফখরুল

কাল ১০ বিভাগে বিএনপির সমাবেশ
বিএনপির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

ছয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে গত বুধবার অনুষ্ঠিত ছয় উপনির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তথাকথিত নির্বাচন কমিশন যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে সেখানে ভোটারের সংখ্যা ইসির হিসাব মতো ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। আর আমাদের হিসাব মতে- এটা ৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকাগুলোতে যে ছবিগুলো আসছে সেগুলো একেবারে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো। শফিউল আলম প্রধানের (মরহুম জাগপা প্রধান) ভাষায় কুত্তা মার্কা নির্বাচনের মতোই। অনলাইনে দেখেছি, কুকুর শুয়ে আছে মানুষ নাই। এই অবস্থায় তারা (সরকার) নিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানে দুর্নীতি লাগামহীন, যেখানে চুরি হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য সেখানে বিশ্ব মন্দার কথা বলে কোনো লাভ নেই। বিশ্ব মন্দার পরে আপনারা মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তুলছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
চালের দাম ক্ষমতাসীনরা বাড়াচ্ছেন, লবণের দাম, তেলের দাম আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। আজকে বিদ্যুতের দাম দু’বার তিনবার, চারবার, পাঁচবার না ১৫ বার বাড়িয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুতে যে চুরি আপনারা করছেন সেই চুরি বন্ধ করলে তো বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয় না। গ্যাসে যে চুরি হচ্ছে, সেই চুরি বন্ধ করলেও দাম বৃদ্ধি করতে হয় না।
‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে’ : সংসদে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিনজো অ্যাবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু জাপানকে কেন আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে। এটা সত্য। এ দেশে চলমান যে শাসনব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ সরকার যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার করে, দুর্নীতি-লুটপাটের মধ্য দেশকে ধ্বংস করছে, তারা যে সম্পূর্ণ এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স করে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে হত্যা করছে, গুম করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে- এই বিষয়গুলো তো অবশ্যই আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার সমানে মিথ্যাচার করছে। সংসদে মিথ্যাচার করছে, বিদেশীদের সামনে মিথ্যাচার করছেন- সবসময় বলছেন যে, এখানে নাকি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে- সেটির নজির অনেক আছে। আমরা নিজেরাই তো এ দেশে জানতাম না এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স কাকে বলে? গুম করা কাকে বলে? আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এটা জানতে পারছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুনির হোসেন, মহানগর বিএনপির নেতা রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, আবদুল হালিম মিঞা, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, যুব দলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস কে জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের কাজী আলমগীর হোসেন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ সফলে নানা প্রস্তুতি : যৌথসভায় সরকারের দমন-পীড়ন, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামীকাল ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সদরে সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে এ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সমাবেশে অংশ নেবেন। বিএনপির দফতর থেকে জানানো হয়েছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশে, মির্জা আব্বাস রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে, ড. আবদুল মঈন খান বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে, নজরুল ইসলাম খান চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে, বেগম সেলিমা রহমান সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে, ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে এবং বরকত উল্লাহ বুলু ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবরা এসব সমাবেশগুলোতে উপস্থিত থাকবেন। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক, সহসম্পাদক, সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ বিভাগের সমাবেশে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বিভাগীয়, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর ইউনিটে প্রস্তুতি সভা করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর, উপজেলা নেতারা বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে মহানগর ও পৌর ওয়ার্ডে এবং উপজেলা ও ইউনিয়নে পাড়া-মহল্লায়, হাটবাজারে গণসংযোগ, পদযাত্রা, পথসভা, হাটসভা ও প্রচারপত্র বিতরণ করেছে। বিএনপি এ সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
ইউট্যাবের আলোচনা সভা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের শেকড়ে টান দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ব্যর্থ করতে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছে না। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। এটা জাতির অস্তিত্বের লড়াই। গতকাল এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সহযোগিতায় ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক : দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো: সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শাহ শামীম আহমেদ। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের কার্বনডাই অক্সাইড, মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্কিত তত্ত্বসহ বেশ কিছু বইয়ের অসংখ্য ভুল এবং অসত্য তথ্য তুলে ধরেন।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, শিক্ষক নেতা মো: জাকির হোসেন, অধ্যাপক মো: আল আমিন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক মামুনুর রশিদ, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, অধ্যাপক মাসুদুল হাসান, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শরিফুল করিম, অধ্যাপক শের মাহমুদ, অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, ড. ফজলুল হক সৈকত প্রমুখ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ডা: জাহেদুল কবির, জেড আর এফের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, জাসাসের জাহিদুল আলম হিটোসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আমাদের খোলনলচে পাল্টে দিতে চায়। যার প্রমাণ এই পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। আজকে যেসব সন্তান যারা প্রাথমিক শিক্ষা নেয় সেটা তার সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। এই শিক্ষাকে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উদ্বেগের। এটা একটি জাতি ধ্বংসের নীলনকশা। অসত্য ও ভুলে ভরা পাঠ্যবই। জাতিকে মূর্খ এবং জ্ঞানহীন করে তোলার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুলে ভরা পাঠ্যবই বাতিল এবং যারা দায়ী তাদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল