২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্ষপূর্তিতে বড় হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া : ইউক্রেন

-

রাশিয়া বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এবং তা ২৪ ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। তিনি বলেছেন, মস্কো লাখ লাখ সেনা জড়ো করেছে এবং তারা আক্রমণের বর্ষপূর্তিতে ‘কিছু করার’ চেষ্টা করতে পারে। তার মতে এবারের বড় আক্রমণ এমনকি ২৩ ফেব্রুয়ারিও শুরু হতে পারে।
রাশিয়াসহ এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল, এমন অনেক দেশের সেনাবাহিনীই এদিনটিকে ‘পিতৃভূমি রক্ষার দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। নতুন আক্রমণের জন্য মস্কো প্রায় ৫ লাখ সেনা জড়ো করেছে, রেজনিকভ এমনটাই ধারণা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দেশের ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন লাখের মতো নতুন সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন নিয়োগ ও ইউক্রেনে পাঠানো সেনার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে অনুমান রেজনিকভের।
ফ্রান্সের বিএফএম নেটওয়ার্ককে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তিন লাখের কথা বলেছিল, কিন্তু আমরা যখন সীমান্তে দেখি, আমাদের মূল্যায়ন বলছে এই সংখ্যা অনেক বেশি।’ পূর্বাঞ্চলীয় দনেস্কে তুমুল লড়াই চললেও ইউক্রেন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুনর্দখল করার পর থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রগুলো মোটামুটি স্থিতিশীলই আছে। এ সময়ের মধ্যে রাশিয়া কেবল ছোট তবে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর সোলেদার দখল করতে পেরেছে; এর বাইরে কেউই বলার মতো কোনো সাফল্যই পায়নি।
কিন্তু বসন্তে এই পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তাদের অনুমান, আবহাওয়া অনুকূলে এলে রাশিয়া বড়সড় আক্রমণে নামবে, অন্য দিকে ইউক্রেনও পাল্টা আক্রমণের পথ খুঁজবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারও সম্প্রতি বলেছে, মস্কো এ সময় ‘মারাত্মক কোনো পদক্ষেপ’ নেয়ার কথা ভাবতে পারে এবং পূর্বাঞ্চলে ‘বড় আক্রমণ’ শানাতে পারে। রেজনিকভ বলেছেন, সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনের কমান্ডাররা ‘যুদ্ধক্ষেত্র স্থিতিশীল করে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে’ চাইবেন। তিনি বলেছেন, ‘২০২৩ সালেই যে আমরা সামরিকভাবে বিজয় অর্জন করব, সে ব্যাপারে আমার বিশ্বাস আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেইনের বাহিনী যে উদ্যম অর্জন করেছে, তা হারাতে পারি না আমরা ।’
ইউক্রেনের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রান্সে গেছেন অতিরিক্ত এমজি-২০০ বিমান প্রতিরক্ষা রাডার কেনার চুক্তি করতে। এই রাডার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনসহ আকাশপথে আসা ‘টার্গেট’ শনাক্তে কিয়েভবাহিনীর সক্ষমতা ব্যাপক বাড়াবে বলেই ধারণা তার। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বাহিনীকে বসন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুরো দনবাস দখলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ বলেছেন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল কব্জা করার পরিকল্পনা ত্যাগ করেছেন। সোমবার তিনি বলেন, তারা সমানে নতুন অস্ত্র, গোলাবারুদ জোগাড় করছে, নিজেদের উৎপাদন বাড়াচ্ছে, সাথে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর কাছ থেকেও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রেসিডেন্ট পুতিন যে প্রতিবেশী দেশকে, ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য বদলেছেন, তার কোনো সঙ্কেত দেখছি না আমরা। যতক্ষণ এমনটা থাকবে, ততক্ষণ দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।’
১ ডলারে ড্রোন দেয়ার প্রস্তাব মার্কিন কোম্পানির : মাত্র এক ডলারের প্রতীকী মূল্যে ইউক্রেনকে দুটি উন্নত সামরিক নজরদারি ড্রোন দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি। খবর এএফপির। জেনারেল অ্যাটোমিক অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস নামের মার্কিন কোম্পানি গত বুধবার এমন ঘোষণা দিয়েছে। একই সাথে তারা মার্কিন সরকারকে এই ড্রোন বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন দিতে আহ্বান জানিয়েছে। জেনারেল অ্যাটোমিক বলেছে, তারা কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনকে শক্তিশালী গ্রে ইগল ও রিপার ড্রোন সরবরাহের জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করছে। এই ড্রোন আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকসহ অন্যান্য সঙ্ঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবহার করেছে মার্কিন বাহিনী। এসব এলাকায় নজরদারি ও নিশানাভিত্তিক হামলার ক্ষেত্রে এই ড্রোনের প্রভাব ছিল দুর্দান্ত।
কোম্পানিটির তথ্য মতে, তারা যে ড্রোন দুটি ইউক্রেনের কাছে বিক্রি করতে চায়, সেগুলো মাঝারি উচ্চতা দিয়ে দীর্ঘ দূরত্বের পথ উড়তে পারে। এই ড্রোন কোনো বাহিনীর শক্তি বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনের এই প্রযুক্তি দরকার। মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউক্রেনকে বেশ কয়েকটি ছোট ড্রোন সরবরাহ করেছে। এগুলো হামলা ও নজরদারি চালাতে সক্ষম। তবে এগুলো জেনারেল অ্যাটোমিকের ড্রোনের মতো উন্নত প্রযুক্তি ও দূরপাল্লার সক্ষমতাসম্পন্ন নয়।
কিয়েভে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট : এ দিকে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে কিয়েভ সফরে গেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে বাকি আছে মাত্র ২২ দিন। কিয়েভ রেলওয়েস্টেশনে দাঁড়ানো একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, আমরা এখানে একসাথে এসেছি ইইউ বরাবরের মতোই দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের পাশে আছে তা দেখাতে এবং আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতাকে আরো গভীর করার জন্য। ভন ডের লেইন ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেলের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করার কথা রয়েছে।
ইসরাইলকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি : ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো প্রসঙ্গে ইসরাইলকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ইঙ্গিত দেয়ার পর রাশিয়ার তরফ থেকে এই কড়া বার্তা দেয়া হলো। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ইসরাইলকে উদ্দেশ করে বলেন, তাদের অস্ত্র আসলে যুদ্ধের বিস্তার ঘটানো ছাড়া আর কিছুই করবে না। আর এসব অস্ত্র হবে রাশিয়ার জন্য বৈধ টার্গেট। এ খবর দিয়েছে আরটি।
খবরে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার ইঙ্গিত দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমা সব দেশই ইউক্রেনে অব্যাহতভাবে অস্ত্র পাঠিয়ে চলেছে। তবে এর ব্যতিক্রম ছিল ইসরাইল। তারা রুশ অভিযানের সমালোচনা করলেও ইউক্রেনকে সহায়তা করতে ছিল নারাজ। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বলেই জানান নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইউক্রনকে ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement