২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহে মরিয়া ব্যাংক

বাফেদার হুঁশিয়ারি সিদ্ধান্ত অমান্য করলে ব্যবস্থা
- ছবি - ইন্টারনেট

ডলার সঙ্কট মেটাতে রেমিট্যান্স সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু কিছু ব্যাংক। তারা ডলারের অভিন্ন মূল্যের চেয়ে বাড়তি ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। যেখানে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে ডলারের অভিন্ন দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৭ টাকা, সেখানে কোনো কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে নিয়মের মধ্যে থেকে লেনদেনকারী ব্যাংকগুলো পড়েছে বেকায়দায়। পাশাপাশি তা আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে গুরুতর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাফেদার চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, বাফেদা-এবিবি সিদ্ধান্ত অমান্য করে বাড়তি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ করা হবে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে বাজারে ডলার সঙ্কট বেড়ে যায়। এতে বাজারে ডলারের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকা ওঠে। ব্যাংকেও ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উঠে যায়। এমনি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা ও ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ (এবিবি) যৌথ উদ্যোগে রেমিট্যান্সের একক দর নির্ধারণ করে। প্রথমে ১০৮ টাকা করা হয়। পরে তা কমিয়ে ১০৭ টাকায় আনা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাফেদা ও এবিবির নির্ধারিত ডলারের একক দর কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো ব্যাংক তিন থেকে চার টাকা বেশি দরে ডলার সংগ্রহ করছে। এ বিষয়ে গত ১৮ জানুয়ারি বাফেদা ও এবিবি যৌথ বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। গতকাল প্রতিটি ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি মো: আফজাল করিম এবং এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি এবং সিইও সেলিম আর এফ হোসাইন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো ডলার সঙ্কটের কারণে পণ্য আমদানি দায় মেটাতে পারছে না। এতে অনেক ব্যাংক অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ডলার সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু কিছু ব্যাংক। তারা বাফেদা-এবিবি নির্ধারিত একক দর মানছে না। নির্ধারিত দরের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে ডলার কিনছে। গতকাল সোমবার কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতি ডলার ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এতে অনেক ব্যাংক পড়েছে বেকায়দায়। যারা নিয়মনীতির মধ্যে থেকে রেমিট্যান্স আহরণ করছিল তারা আর প্রয়োজনীয় ডলার সংগ্রহ করতে পারছে না। কারণ যে ব্যাংক বেশি দাম দেবে ওই ব্যাংকের মাধ্যমেই রেমিট্যান্স পাঠায় বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। এ কারণে অপেক্ষাকৃত বেশি দাম দিচ্ছে যেসব ব্যাংক ওইসব ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংগ্রহ বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানান, প্রতিটি ব্যাংকের মাসের প্রথমেই রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য আগাম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলে এবং এলসির দায় পরিশোধ করে। কিন্তু মূল্যে পার্থক্যের কারণে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমে যাওয়ায় তারা এখন বেকায়দায় পড়ে গেছে। একদিকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করলে বাফেদা-এবিবি সিদ্ধান্ত অমান্য করা হয়, অপর দিকে নিয়ম মেনে ডলার সংগ্রহ করলে রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমে যাচ্ছে। এতে পূর্বনির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় নির্বাহে ব্যর্থ হতে হচ্ছে। এতে বিদেশী ব্যাংকগুলোর সাথে করা চুক্তির খেলাপ হওয়ায় বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে তারা এখন উভয় সঙ্কটে পড়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement