২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রিজভী, এ্যানী, খোকনসহ ৪৪৫ বিএনপি নেতাকর্মী কারাগারে

-

রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শামসুর রহমান, খায়রুল কবির খোকনসহ ৪৪৫ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জেল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।


অসুস্থতার কারণে পল্টন থানায় নাশকতার অভিযোগে মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
অন্য দিকে এ মামলায় বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাদের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি বলেন, অসুস্থ নেতাকর্মীদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করতে বলেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনজীবীরা তাদের জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে হাজির করা হলে তাদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। এ সময় আদালত এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়।


জামিন আবেদনের শুনানিতে বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা বলেন, পুলিশ বিএনপি অফিসে বোমা নিয়ে গেছে। বিএনপি অফিস থেকে বোমা উদ্ধার হয়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। বিএনপি অফিসে কিছু পাওয়া যায়নি। কোনো আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন- আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বুরহান উদ্দিন, মহসিন মিয়া, খেরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ মিয়া আলম, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল খালেক মিলন। এ সময় পাঁচ শতাধিক বিএনপি সমর্থক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য দিকে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী শেখ হেমায়েত হোসেন ও আবদুল্লাহ আবুসহ ৪০ থেকে ৫০ জন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আমানউল্লাহ আমানসহ দুইজনকে জামিন দিয়ে বাকি ৪৪৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মী।


বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় গুলিবর্ষণ, হামলা এবং পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন। পুলিশ বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এ দিন দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ২৩ আসামিকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান।
রিমান্ডে নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা হলেন, বিএনপির সহ জলবায়ু সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপি নেতা শাহজাহান, এ কে এম আমিনুল ইসলাম, ওয়াকিল আহমেদ, সজীব ভূঁইয়া, সারোয়ার হোসেন শেখ, সাইদুল ইকবাল মাহমুদ, মিজানুর রহমান, আল আমিন, সাইফুল, শুভ ফরাজি, মাহমুদ হাসান রনিসহ ২৩ জন।
এ ঘটনায় পল্টন থানার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদি হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।


গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় বিএনপির এক হাজার ৯০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ৪৭৩ জনের নামে এবং অজ্ঞাত এক হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। একই ঘটনায় মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরো দু’টি মামলা করা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা এই দুই মামলায় বিএনপির ৮০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালতে ২ পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা স্লোগান, বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি: এ দিকে আটক বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে আনাকে কেন্দ্র করে সিএমএম আদালতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়। এ দিন বেলা ২টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বেলা পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে আসা হয় আটক বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ সময় সিএমএম আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। বেলা পৌনে ১টার দিকে আটক নেতাকর্মীদের আদালতে তোলার আগে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।


২ মামলায় হাজিরা দিলেন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ ৫ নেতা : তিন বছর আগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা নাশকতার দুই মামলায় হাজিরা দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ ৫ নেতা। তারা হলেন- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে হাজিরা দেন এ পাঁচ নেতা। হাজিরা শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা আদালত থেকে বেরিয়ে যান। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শাহবাগ থানায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলার ধার্য তারিখ ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল