২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

গুজবে কেউ কান দেবেন না ব্যাংকে টাকার সমস্যা নেই

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকার কোনো সমস্যা নেই। প্রতিটি ব্যাংকে টাকা আছে। তাই ‘ব্যাংকে টাকা নেই’ এ ধরনের কোনো গুজবে কান দেবেন না। গতকাল মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি কথা আমি বলতে চাই, কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নাই, টাকা নাই বলে মানুষ টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, এদের চোরের সাথে কোনো সমঝোতা আছে কিনা যে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো। চোর চুরি করে খেতে পাবে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা নাই, প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। এসব মিথ্যা কথা বলে আজকে তারা ভাঁওতাবাজি করে বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা শ্রেণী আছে, তারা এটা করছে। কারণ, মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী।’
বিএনপি, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা যাতে কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে তা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭৬। যেকোনো সময় আমি অক্কা পেতে পারি। কিন্তু আমাদের বাকি প্রজন্মকে কাজ করতে হবে। সেভাবে গড়ে উঠতে হবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন মুছে ফেলতে না পারে। বাংলাদেশের ক্ষমতায় যেন আর কখনো বিএনপি জামায়াত আসতে না পারে, সে জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।’
করোনা মহামারী ও বন্যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগকে সোনার ছেলেরা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো কিছু করার আগে ছাত্রলীগকে পাশে রাখতেন। তাদের জানাতেন। আজকেও ছাত্রলীগ একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয়, আমাদের দেশে ভূতের রূপ নিয়েই আসে। তিনি বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না- এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল। সরকারের ঢালাও সমালোচক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে তখন কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সাথে। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার আসামি। এই অপরাধীদের সাথে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সাথে গিয়ে মিলেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট’-এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।
সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখে এ দেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে, খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনো দিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেইভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে।প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ছাত্রলীগ কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপের উদ্বোধন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি যথাক্রমে কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন।
জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে পরিচিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং এটি প্রাথমিকভাবে এক লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। জাপানের জন্য নিবেদিত একটি ইজেড (অর্থনৈতিক অঞ্চল) প্রতিষ্ঠার ভিশন ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেছিলেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ২০১৬ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। পরে ২০১৯ সালে জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন বিএসইজেড বিকাশের জন্য বেজার সাথে চুক্তি করে। গতকাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইটিও নাওকি এবং সুমিতোমো করপোরেশন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসায়ুকি হায়োডো।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। কারণ আমরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছি। তাই আমি আশা করি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে এবং স্থানীয় জনগণও নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত হবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার রয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সমৃদ্ধ হবেন, আমাদের দেশেরও উন্নতি হবে।’
বাংলাদেশকে সাবলীলভাবে উন্নত দেশে পরিণত করার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সাবলীলভাবে স্নœাতক অর্জন করে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ থেকে সাবলীলভাবে উন্নত দেশে পরিণত করতে স্নাতক অর্জনে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। যাতে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।’ প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত করতে স্নাতক অর্জন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রতিবেদন প্রদান ও উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত করতে স্নাতক অর্জনে লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে এবং কিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা যায়, সে লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ যাতে সাবলীলভাবে স্নাতক অর্জন করতে পারে সে লক্ষ্যে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে একটি কমিটি ও কিছু সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা রক্ষা করে এবং সব বাধা পেরিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারের মাধ্যমে কিভাবে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement