২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতকে হারিয়ে অবিশ্বাস্য জয় টাইগারদের

ভারতের বিপক্ষে জয়সূচক রান নেয়ার পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস : নয়া দিগন্ত -

শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ভারতের বিরুদ্ধে ১ উইকেটের থ্রিলার জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের ৫২ বল বাকি থাকতে ভারতকে ১৮৬ রানে গুঁড়িয়ে দেয় টাইগাররা। লক্ষ্যটা নাগালেই ছিল। কিন্তু ‘সহজ’ রান তাড়া করতে নেমে ১৩৬ রানের মধ্যে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জয় তখন দূরের বাতিঘর। সেখান থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে ২৪ বল বাকি থাকতে জিতল বাংলাদেশ (১৯০/৯)। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। আগামী বুধবার একই ভেনুতে দ্বিতীয় ওয়ানডে হবে।
চাহারের করা ৪৬তম ওভারের প্রথম বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে, কাট করে চার মারেন মিরাজ। পরের দুই বল ডট দেয়ার পর চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগ থেকে সিঙ্গেল। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩ রান। চাহারের সে বলটি ছিল নো, ফলে বাড়তি ১ রানের সাথে ফ্রি হিটও পায় বাংলাদেশ। তবে ফ্রি হিটের ডেলিভারিটি চাহার করেন শর্ট, মিস করেন মোস্তাফিজ। পরের বলে মিড উইকেট থেকে সিঙ্গেল, সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙলেও মোস্তাফিজ ক্রিজে পৌঁছে যান তার আগেই। সে সিঙ্গেলই নিশ্চিত করে, ম্যাচ হচ্ছে টাই। শেষ বলে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে মারা শটে বাংলাদেশের ১ উইকেটের নাটকীয় জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।


চোট নিয়ে এই ম্যাচ থেকে আগেই ছিটকে গেছেন নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের জোয়াল পড়ে লিটন দাসের কাঁধে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে ভাগ্যও নিজের অনুকূলে পেয়েছেন তিনি। টস জিতে প্রতিপক্ষ ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের ১৫তম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়া লিটন দাস।
ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও বড় জুটি গড়তে পারেননি ভারতের দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। উইকেটের অবস্থা বুঝে চতুর্থ ওভারেই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক লিটন। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ধাওয়ানকে বোল্ড করেন মিরাজ। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়ে ৭ রানে ফেরেন ধাওয়ান।
এরপর ৩ নম্বরে নামা বিরাট কোহলিকে নিয়ে জুটির চেষ্টা করেন রোহিত। দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন তারা। ভারতের দুই সেরা ব্যাটারকে আটকাতে আবারো চমক দেখান লিটন। ১১তম ওভারেই সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের প্রথম ওভারেই রোহিত-কোহলিকে তুলে নেন সাকিব। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন রোহিত (২৭)। চতুর্থ বলে শর্ট কাভারে ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন কোহলি (৯)। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন।


৪৯ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল। বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় থাকা শ্রেয়াস-রাহুলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান পেসার এবাদত হোসেন। ২০তম ওভারের শেষ বলে শ্রেয়াসকে আউট করেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে আউট ২৪ রান করা শ্রেয়াস। পঞ্চম উইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে ৭৫ বলে ৬০ রান যোগ করেন রাহুল। এই জুটি এত বড় হতো না যদি ২৮তম ওভারে মিরাজের বলে লং-অফে ওয়াশিংটনের ক্যাচ না ফেলতেন এবাদত। তখন ১২ রানে ছিলেন সুন্দর। পরে ৩৩তম ওভারে সুন্দরকে (১৯) ফেরান সাকিব। দলীয় ১৫২ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে সুন্দরের বিদায়ের পর বেশি দূর যেতে পারেনি ভারত। ৪২তম ওভারে ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। শেষ ৫ উইকেটের মধ্যে এবাদত ৩টি ও সাকিব ২টি উইকেট নেন।
ভারতের দীপক চাহারকে শিকার করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট নেন সাকিব। পুরো ১০ ওভার বল করে ৩৬ রানে ৫ উইকেট নেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা এবাদত ৮.২ ওভার বল করে ৪৭ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার মাঝে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন রাহুল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসে ৭৩ রান করেন তিনি।
‘সহজ’ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (০)। দলীয় ২৬ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন এনামুল হক বিজয় (১৪)। তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়েন সাকিব ও লিটন। ৪৮ রানে এই জুটি বিচ্ছিন্ন হতেই পথ হারায় বাংলাদেশ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে টাইগারদের ইনিংস। নিয়মিত বিরতি দিয়ে একে একে সাজঘরে ফিরলেন লিটন (৪১), সাকিব (২৯), মুশফিকুর রহীম (১৮) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৪)। দেড় শ’র আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে অলৌকিক এক জুটি গড়েন মিরাজ ও মোস্তাফিজ।


৫৪ রানের অবিশ্বাস্য জুটি গড়েন তারা। মিরাজ ৩৯ বলে ৩৮ রানে অজেয় থাকেন। ১১ বলে ১০ রানে অপরাজিত মোস্তাফিজ। ম্যাচ শেষে এই দু’জন হয়ে গেলেন উদযাপনের মধ্যমণি। যদিও জয়ের ভিতটা সাকিব ও ইবাদতই গড়ে দিয়েছেন। কিন্তু নিশ্চিত হার থেকে যখন মহানাটকীয় জয় চলে আসে, তখন লাইম লাইটে থাকেন তারাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত ইনিংস : ১৮৬ (৪১.২ ওভার) (রোহিত ২৭, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯; মোস্তাফিজুর ০/১৯, হাসান ০/৪০, মিরাজ ১/৪৩, সাকিব ৩/৩৬, এবাদত ৪/৭৪)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ১৮৭/৯ (৪৬ ওভার) (শান্ত ০, লিটন ৪১, এনামুল ১৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ১৮, মাহমুদুল্লাহ ১৪, আফিফ ৬, মিরাজ ৩৮*, এবাদত ০, হাসান ০, মোস্তাফিজ ১০*; চাহার ১/৩২, সিরাজ ৩/৩২, সেন ২/৩৭, সুন্দর ২/১৭, ঠাকুর ১/২১)।

ফল : বাংলাদেশ ১ উইকেট জয়ী।
ম্যাচসেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল