২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শীতে ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা কমার ইঙ্গিত মার্কিন গোয়েন্দাদের

-

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা বর্তমানে কমে এসেছে এবং শীতে এটি আরো কমবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল হায়েন্স। শনিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি সামরিক অনুষ্ঠানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল হায়েন্স জানিয়েছেন, শীত এলেও রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সেনারা প্রতিরোধ কার্যক্রম একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। তিনি আরো জানিয়েছেন, শীত শেষ হওয়ার আগে রাশিয়া-ইউক্রেন দুই দেশই সামনের দিনগুলোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবে। বিশেষ করে রাশিয়ার সেনারা। তারা শীত শেষে একটি পাল্টা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মার্কিন এ কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, গত মাসে খেরসন শহর থেকে রাশিয়া তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার পর উত্তেজনা একেবারেই কমে যায়।
এ ছাড়া যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের স্বচ্ছ ধারণা নেই বলেও দাবি করেছেন শক্তিশালী এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ‘এখন রাশিয়ার সেনারা অস্ত্র, মনোবল, সরবরাহ, লজিস্টিক সব মিলিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় আছে।’


রাশিয়া যুদ্ধের শুরুর কয়েক মাসে ইউক্রেনের বেশ বড় একটি অংশ দখল করেছিল। কিন্তু ইউক্রেনের সেনাদের পাল্টা আক্রমণের কারণে সেসব অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি থেকে পিছু হটতে হয়েছে তাদের। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কথিত বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। এতে হাজার হাজার সেনা ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে বর্তমানে সম্মুখভাগে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা একেবারে নেই বললেই চলে।
যুদ্ধকে বর্বরতার নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন পুতিন : তবে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘বর্বরতার’ নতুন স্তরে নিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ একজন কূটনীতিক। তিনি বলেছেন, পুতিন ইউক্রেনের সাথে শান্তি আলোচনার বিষয়ে আন্তরিক নন। একই সাথে বেসামরিক নাগরিকদের আলো নিভিয়ে যুদ্ধকে ‘বর্বরতার’ নতুন স্তরে নিয়ে গেছেন তিনি। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংসে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। এ পরিস্থিতিতে শনিবার কিয়েভ সফর করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। সেখানে রুশ আত্রমণ মোকাবেলায় সমর্থন জানাতে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘(যুদ্ধ বন্ধে) কূটনীতি অবশ্যই সবার অগ্রাধিকার কিন্তু সেটি করতে গেলে আপনার একজন আগ্রহী অংশীদার থাকতে হবে এবং এটি খুব স্পষ্ট, জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণ হোক আর ক্রেমলিনের বাগ্মীতা; যেটিই হোক না কেন, পুতিন এর জন্য এখনো আন্তরিক বা প্রস্তুত নন।’


মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রুশ নেতা যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী হলে তিনি পুতিনের সাথে কথা বলতে প্রস্তুত। কিন্তু বাইডেনের এই পরিকল্পনা বেশ দ্রুতই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে যখন ক্রেমলিন জানায়, পশ্চিমাদের অবশ্যই মস্কোর চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের রুশ অধিগ্রহণকে স্বীকৃতি দিতে হবে। রাশিয়ার এই প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নুল্যান্ড বলেন, ‘বাইডেনের পরিকল্পনা সম্পর্কে মস্কোর এই জবাব এটাই দেখাচ্ছে যে, তারা (রাশিয়া) যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়।’ রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়। মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এ কৌশলের প্রভাব আরো তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে। নুল্যান্ড বলছেন, ‘পুতিন এই যুদ্ধটিকে বর্বরতার একটি নতুন স্তরে নিয়ে গেছেন। যুদ্ধকে তিনি ইউক্রেনের প্রতিটি বাড়িতে নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি লাইট ও পানি সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পুতিন যা পারেননি এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি তা অর্জন করার চেষ্টা করছেন।’
মারিউপোলে বড় সামরিক স্থাপনা গড়ছে রাশিয়া : এ দিকে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলে সেনা উপস্থিতি জোরদার করছে রাশিয়া। স্যাটেলাইটের বেশ কিছু ছবিতে দেখা গেছে, নগরীটিতে বড় ধরনের সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলছে রাশিয়া। বিবিসি জানায়, নতুন ইউ-আকৃতির কম্পাউন্ড গড়ে তোলা হচ্ছে নগরীর কেন্দ্রস্থলে। এর ছাদে উড়তে দেখা গেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর প্রতীক লাল, সাদা ও নীল তারা। সাথে লেখা রয়েছে ‘মারিউপোলের মানুষদের জন্য’। এ ভবনটিই সামরিক স্থাপনা বলে প্রতীয়মান হয়েছে মাক্সার কোম্পানির স্যাটেলাইট ছবিতে।


চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর রাশিয়া প্রায় তিন মাস মারিউপোল নগরী অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের অবিরাম হামলায় শহরটির বেশির ভাগ এলাকাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন কর্মকর্তারা গত মাসে একটি আনুমানিক হিসাব তুলে ধরে জানায়, রাশিয়ার হামলায় নগরীর প্রায় ২৫ সাধারণ লোক নিহত হয়েছে। অন্য দিকে জাতিসঙ্ঘ এখন পর্যন্ত নগরীটিতে এক হাজার ৩৪৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে সংস্থাটি বলেছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো কয়েক হাজার বেশি হতে পারে।
রাশিয়া-বেলারুশ আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর : রাশিয়া ও বেলারুশ একটি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও বেলারুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিক্টর খ্রেনিন শনিবার মিনস্কে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বৈরী গতিবিধি মোকাবেলায় অঙ্গীকারবদ্ধতার জন্য বেলারুশের প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি তিনি রাশিয়া ও বেলারুশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মিনস্কের প্রস্তুতিমূলক অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।


ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রধান সমর্থক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বেলারুশ। দুই দেশের যৌথ নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাশিয়ার কিছু সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম বেলারুশে মোতায়েন রয়েছে। হাইপারসনিক কিনঝল মিসাইলবাহী কয়েকটি রুশ জঙ্গিবিমান বেলারুশে অবস্থান করছে। সের্গেই শোইগু বলেছেন, বেলারুশ আমাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র। আমাদের দুই দেশের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নজিরবিহীন চাপপ্রয়োগ ও অঘোষিত যুদ্ধের এই সময়ে বেলারুশের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব রাখে। তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসেবে রুশ সৈন্যদল বেলারুশের ভূখণ্ডে অবস্থান করছে এবং দুই দেশের সশস্ত্রবাহিনীর যুদ্ধবিষয়ক সমন্বয় মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী শনিবার মিনস্ক সফর করেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে এ সফরে অংশ নেন। মিনস্ক সফরকালে বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগদান ছাড়াও তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সাথে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, সের্গেই শোইগু বেলারুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে প্রতিরক্ষাবিষয়ক কয়েকটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছেন। এসব চুক্তি রুশ ফেডারেশন ও বেলারুশের মধ্যে সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মিথস্ক্রিয়ার পথ প্রশস্ত করবে এবং ন্যাটোর হুমকির মুখে বেলারুশের প্রতিরক্ষাকে সংহত করবে। বেলারুশের বার্তা সংস্থা বেলটা জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা যৌথ আঞ্চলিক সামরিক নিরাপত্তা বিষয়ে ১৯৯৭ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিটি সংশোধনের প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কা বলেছেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য যেকোনো আগ্রাসন এক ও অভিন্ন বাহিনী হিসেবে প্রতিরোধ করা যায়। রাশিয়ার সাথে বিদ্যমান চুক্তিগুলোর অঙ্গীকার পূরণে বেলারুশ প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি সের্গেই শোইগুকে আশ্বস্ত করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল