১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ঙ্কর নভেম্বর’ প্রতিবেদন নিয়ে রিটের পরামর্শ হাইকোর্টের

-

ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া এবং এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনায় রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ পরামর্শ দেন।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি এ সময় আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেন। আদালত বলেন, প্রতিবেদনগুলো সংযুক্ত করে রিট আবেদন আকারে কোর্টে আসুন। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, তারা আদালতে রিট করবেন।


বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠান তিন আইনজীবী। শিশির মনিরসহ সুপ্রিম কোর্টের ওই আইনজীবীরা শনিবার এ চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নিয়মিত গ্রাহক। ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে থাকি।
২৪ নভেম্বর পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা অসাধুচক্র তুলে নিয়েছে। এই রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারী হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ঙ্কর নভেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেড অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। সব মিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।


আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর সময়ে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ঙ্কর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন। একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সঙ্কটের পর টাকার সঙ্কট বড় আলোচনার বিষয়।
এ দিকে গত মঙ্গলবার ২৯ নভেম্বর একটি ইংরেজি পত্রিকায় এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি ঋণ নিয়েছে- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনটিও আদালতের নজরে আনা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement