ডিএমপি দিলো সোহরাওয়ার্দী বিএনপি অনড় নয়াপল্টনে
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে ২৬ শর্ত- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৫, আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৮
‘নজিরবিহীন’ ২৬ শর্তে বিএনপিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
কিন্তু দলটি সমাবেশ করতে চায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। গতকাল মঙ্গলবার রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ অবস্থানে বিএনপি অনড় আছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে নীতিনির্ধারকদের সবাই নয়া পল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে একমত হন। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা শেষ পর্যন্ত নয়া পল্টনে সমাবেশের জন্য প্রশাসনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
এতদিন মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে ২৬ শর্তে অনুমতি দিলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
নয়া পল্টনে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে মহাসমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি দেয় পুলিশ। অনুমতিপত্রে বলা হয়, পুলিশের অনুমতিপত্র মাঠ ব্যবহারের জন্য নয়, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
অবশ্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন, বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না চাইলেও ওই জায়গায় সরকারের পছন্দ কেন? বিএনপিকে চার দেয়ালে আবদ্ধ করে সরকার কী প্রমাণ করতে চায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ২৬ শর্তকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বড় সমাবেশ করার উপযুক্ত নয়। সেখানে নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। মাঠে প্রবেশের দুইটি ছোট গেট আছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কীভাবে দুইটি ছোট গেট দিয়ে প্রবেশ করবে? উদ্যানের বাইরেও হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকবেন। মাঠে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এবং দেয়াল দিয়ে ঘেরাও উদ্যানের মূল সমাবেশ থেকে বাইরের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। তা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থান থাকায় ওই দিক দিয়ে কেউ মাঠে প্রবেশ করবে না। শাহবাগ মোড়েও নেতাকর্মীরা বাধার মুখে পড়তে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তার দায়ভার কে নেবে?
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত জায়গায় মহাসমাবেশ করতে চান তারা। সেখানে বড় সমাবেশের আলাদা একটি আমেজ তৈরি হয়। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে নেতাকর্মীদের চলে যাওয়ার মতো আশপাশের অনেক সড়ক রয়েছে, যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেই।
বৈঠকে আলোচনা হয় জনদুর্ভোগ নিয়েও। এ বিষয়ে নেতারা বলেন, ১০ ডিসেম্বর শনিবার। ওই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে নয়া পল্টন ও আশপাশের এলাকার সড়ক বন্ধ থাকলে তেমন সমস্যা হবে না। তা ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে মাঠ পেরিয়ে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন হয়ে প্রেস ক্লাব ও সেগুনবাগিচা পর্যন্ত সমাবেশের প্রভাব থাকবে। নয়া পল্টনের চেয়ে শাহবাগ ধরে পুরানা পল্টনের সড়কটি অনেক বেশি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলেন, বিএনপির সমাবেশে সরকার বাধা দেবে না বললেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। গত কিছু দিনে রাজশাহী বিভাগে ৩৫টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ঢাকার মহা সমাবেশে লোক জমায়েত যাতে কম হয় সে জন্য সরকার সবই করছে। মুখে বাধা দেবে না বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে সময়মতো গ্রেফতার শুরু করবে। অতীতে তা-ই দেখা গেছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, নয়া পল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দূরত্ব সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটার। এমন কী হলো যে দেড় কিলোমিটার দূরে সমাবেশ করা যাবে না? তারা বলেন, সরকার অনুমতি না দিলেও তাদের নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনমুখী থাকবে। বিদ্যুতের লাইন কেটে দিলে জেনারেটর আনা হবে। মাইকের অনুমতি না দিলে হ্যান্ডমাইকে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ শেষ করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নয়া পল্টনে সমাবেশ করব। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নয়া পল্টন ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। সরকার সেখানে কেন অনুমতি দিলো? তাদের উদ্দেশ্য কী?
২৬ শর্ত অনুমতির : রাজধানীর নয়াপল্টনে আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে চেয়ে বিএনপি যে আবেদন করেছিল, যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে তা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল মঙ্গলবার অনুমতি দেয়া হলেও ডিএমপির চিঠিতে বলা হয়, এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
যেসব শর্তে অনুমতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ৩. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। ৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশগেটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ স্থলে আসা সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ স্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৯. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/ সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না। ১০. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না। ১১. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাথে কোথাও লোকসমবেত হওয়া যাবে না। ১২. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ১৩. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। ১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ১৫. সমাবেশ শুরুর ২ (দুই) ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। ১৬. সমাবেশ স্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোটা, রড ব্যবহার করা যাবে না। ১৮. আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘিœত হয়, এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। ১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। ২০. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। ২১. মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না। ২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে, মূল সড়কে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ২৩. সমাবেশ স্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। ২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে। ২৫. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতি আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। ২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনারের সাথে দেখা করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা