২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পোল্যান্ডে থেমে গেল সৌদি আরব

এমবাপ্পের জোড়া গোলে নকআউট পর্বে ফ্রান্স

পোল্যান্ড ২-০ সৌদি আরব
-

কাতার বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। গ্রুপ ডি’তে ফ্রান্স প্রথম ম্যাচে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এবার ২-১ গোলে হারায় ডেনমার্ককে। দুই জয়ের পূর্ণ ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে ফরাসিরা।
অপর দিকে এই ম্যাচটি ডেনিশদের জন্য ছিল বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াই। কারণ আগের ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারল না তারা।
কাতারে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দুই দলই স্কোয়াডে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনে মাঠে নামে। বল দখলের লড়াইয়ে সমানে সমানে খেলা ফ্রান্স ম্যাচের প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল ২২ মিনিটে। গ্রিজম্যানের ফ্রি কিকে ডেম্বেলের বাড়ানো বলে রাবিওট হেড করলে গোলরক্ষক ক্যাপসার রুখে দেন। ৩৫ মিনিটে ডেনমার্কের কাউন্টার অ্যাটাক। সেখানে ফ্রান্সের দুর্দান্ত ডিফেন্সের কাছে বাধাগ্রস্ত হতে হয় ডেনিশদের। ম্যাচের ৪১ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ পায় ডেম্বেলে। চৌয়ামেনির বাড়ানো বলে ডেম্বেলে থেকে এমবাপ্পে পেয়ে শট নিলে গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে গোলশূন্য ড্র’তেই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে আরো উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকা দল দু’টি ৫০ মিনিটে ফ্রান্স সুযোগ মিস করে। ৫৬ মিনিটে এমবাপ্পের শট প্রতিহত করেন গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে। ৫৯ মিনিটে গ্রিজম্যান গোলপোস্টের ওপর দিয়ে বল পাঠান।
৬১ মিনিটে আর রক্ষা করতে পারেনি ডেনিশ রক্ষণভাগ। কাউন্টার অ্যাটাকে প্রথম এমবাপ্পে বল দেন হার্নান্দেজকে। ফিরতি বলে এমবাপ্পের দর্শনীয় গোলে ১-০তে এগিয়ে যায় দিদিয়ের দেশমের দল। ৬৬ মিনিটে ডেনমার্ক একটি সুযোগ মিস করে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে কর্নারে আসা বল অ্যান্ডারসনের মাথা ছুঁইয়ে আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসনের কাছে গেলে তিনি হেডে গোল করেন। ৭২ মিনিটে আবার সহজ সুযোগ মিস করে ডি রোড-হভিডরা।
৭৮ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে সোয়ামেনির হেড ডেনিশ ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে প্রতিহত হয় কর্নারের মাধ্যমে। ৭৯ মিনিটে আবার রাবিওটের দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকটি ছিল বার পোস্টের বাইরে। ম্যাচের ৮১ মিনিটে ডেনমার্কের ব্রেথওয়েটের শট বাম পাশের বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
৮৫ মিনিটে গ্রিজম্যানের ডান প্রান্ত থেকে লম্বা পাসে বাড়ানো বলে এমবাপ্পের হাঁটুর আলতো টাচে বল জালে জড়ালে ২-১-এ এগিয়ে যায় লেস ব্লুজরা। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের খেলা শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে কাতার আসরে প্রথম দল হিসেবে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করল ফ্রান্স।
পোল্যান্ডে থেমে গেল সৌদি আরব (পোল্যান্ড ২-০ সৌদি আরব)
কাল দুপুর থেকেই কাতারের দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম-পানে মানুষের ঢল। এই স্্েরাত এতটাই তীব্র ছিল যে রীতিমতো জ্যাম লেগে যায় রাস্তায়। ১০-১২ মিনিটে পথ মেনই মিডিয়া সেন্টার থেকে এই স্টেডিয়ামের। সেখানে ফুটবলপ্রেমীদের কারণে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা সময় শেষ। এই সাপোর্টারদের বেশির ভাগই ছিল সৌদি আরবের। আগের ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বড় যে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। কাল তাদের আরেকটি জয় দেখতেই ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কিন্তু তা আর হলো না। নিজেদের ভুলে উল্টো হার এশিয়ার দেশটির। তাদের ২-০ গোলে হারিয়ে বরার্ত লেভানোদস্কির দেশ এখন দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন দেখছে। অন্য দিকে হারের ফলে সৌদি আরবকে এখন পরের ম্যাচে জয়ের বাধ্যবাদকতা মেক্সিকোর বিপক্ষে।
পুরো গ্যালারির চেয়ার গোল সাদা আর সবুজ রঙ করা। কাল সৌদি আরবের সমর্থকরাও মাঠে আসে ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাক এবং দলের প্রিয় সবুজ জার্সি। তাদের সরব উপস্থিতিতে মিলিয়ে যাচ্ছিল কয়েক হাজার পোলিশ সমর্থকের কান ফাটা চিৎকার। তবে ম্যাচ শেষে পোল্যান্ডের এই নাগরিকদের ব্যাপক উল্লাস হতাশ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না সৌদি সমর্থকদের। এমন হারের পর অনেক ক্ষণ গ্যালারিতে চুপ করে বসে থাকেন তারা।
‘সি’ গ্রুপের এই ম্যাচ জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হতো সৌদি আরবের। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো এই খেলাতেও তাদের প্রথমে পিছিয়ে পড়া। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত জয় তুলে নিলেও কাল তারা একটিবারের জন্যও পোলিশ গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনি। এই পোল্যান্ডের শেষ প্রহরী ওজনেস সেসজেসনের প্রতিরোধেই দ্বিতীয় ম্যাচে স্বপ্ন ভঙ্গ আরবের দেশটির। তিনি প্রতিপক্ষের সুবর্ণ সুযোগ পেনাল্টিই ঠেকাননি এর সাথে আরো কয়েক দফা বাধা হয়ে দাঁড়ান। যা তাদের জয়ও নিশ্চিত করে।
২৬ মিনিটে সৌদি আরবকে রক্ষা করেন আল সেহরি। পোল্যান্ডের ক্রিস্টেন বেইলেকের হেড গোলে যাওয়ার আগে রুখে দেন তিনি। তবে ৩৯ মিনিটে আর পোস্ট অক্ষত থাকেনি সৌদি আরবের। লেভানোদস্কির কাট ব্যাক থেকে পিতর জিলিসস্কি প্রচণ্ড শটে বল জালে পাঠান। ভেঙে দেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের অন্যতম নায়ক গোলরক্ষক আল ওয়াইসের প্রতিরোধ। এরপর ৪১ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগ পায় সৌদি আরব। বক্সে ফাউলের শিকার আল সেহরি। রেফারি পেনাল্টি দিলে তাতে গোল করতে ব্যর্থ সালেম আল দাইসারি। তার শট ডান দিকে শরীর ফেলে রুখে দেন পোলিশ কিপার। ফিরতি বলে মোহাম্মদ আবু রায়েকের শটও হাত লাগিয়ে কর্নার করেন তিনি।
বিরতির পর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে সৌদি আরব। কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি। এরই মধ্যে পোল্যান্ডের দু’টি প্রচেষ্টা কপাল দোষে জালে যায়নি। ৬৩ মিনিটে আর্কাদুস মিলিকের হেড ক্রসবারে প্রতিহত। ৬৫ মিনিটে দলের অধিনায়ক লেভানোদস্কির শটও পোস্টে লাগে। এরপর আবদুল্লাহ আল মিলকির ভুলে বলের দখল নিয়ে এই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল আদায় লেভানোদস্কি গোল করেন। আর তাতেই হার নিশ্চিত হয় সৌদি আরবের।


আরো সংবাদ



premium cement