২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাচিপের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনিকে লালন করছে

-

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুর এক খুনিকে তারা লালন-পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে তিনি সব বাধা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ধরে এনে সাজা কার্যকর করার দৃঢ় এ মনোভাব ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন মামলা করতে গিয়েছি, আমার মামলা করার অধিকার ছিল না, আমার মামলা নেয়নি। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতি তখন থেকেই তো শুরু। তবুও আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি আর জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই এই হত্যার বিচার করতে পেরেছি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা মামলা করতে পেরেছি, খুনিদের বিচার করতে পেরেছি। তবে এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, আমেরিকায় এক খুনি রয়েছে গেছে তাকে আনার জন্য আমরা বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমেরিকা সেই খুনিকে লালন পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এরকম। আমেরিকা এক খুনিকে লালন পালন করছে। একজন খুনি আমেরিকায়, আরেকজন কানাডায়, দু’জন পাকিস্তানে। আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো ইন্ডিয়ায়, কখনো জার্মানিতে এভাবে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে মোসলেহ উদ্দিন। তার পরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে, পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক এদেরকে ধরে এনে সাজা আমি নিশ্চিত করব ইনশা আল্লাহ। সেটিই আমি চাই।
বাংলাদেশের কয়েকজনের ওপর আমেরিকার স্যাংশন দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এদের কোনো উদ্বেগ নেই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ নেই। যারা ওই আমাদের ওপর স্যাংশন দেয় আমেরিকা, তাদেরও কোনো উদ্বেগ নেই। কারো কোনো উদ্বেগ নেই। কেমন একটা অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটিই আমার কাছে অবাক লাগে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস না, আমরা পাঁচ মাসের আমদানি করতে পারি। সেই পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছে আছে। তা ছাড়া একটি গুজব ছড়াচ্ছে টাকা ব্যাংকে নেই, টাকা পাবে না। তিনি বলেন, সবাই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রাখে। ঘরে টাকা রেখে তো চোরকে সুযোগ করে দেয়া, তাই না? চোরের পোয়াবারো। তারা বেশ ভালোভাবে জানবে ওই বাড়িতে টাকা আছে। এখন চোরের হাতে টাকা তুলে দেবে- না ব্যাংকে টাকা থাকবে, সেটি টাকার মালিক যারা তাদের ওপর নির্ভর করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য রিজার্ভ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন- এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে সবসময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আজকে আমরা এই তৃতীয়বারের মতো এখন সরকারে। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যেন কৃচ্ছ্রতা সাধন করে। সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি বা খাদ্যের কোনো অপচয় যেন না হয় সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। উৎপাদন বাড়াতে পতিত সব জমি আবাদের আওতার আনার আহ্বান পুনর্বার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা চিকিৎসক বা আমাদের এখানে যারা আছেন তাদেরকেও আহ্বান জানাই জমিজমা তো সবার কিছু না কিছু আছে। সবাই যাতে সেখানে ফসল হয় বা কিছু হয়, তরিতরকারি হয়, শাকসবজি হয় তার ব্যবস্থা নেন। সবাই উৎপাদন করেন।
দেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। এর আগে শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্তকরণ ও বেলুন উড়িয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। স্বাচিপের সভাপতি ডা: ইকবাল আর্সলানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বাচিপের মহাসচিব ডা: এম এ আজিজ।
স্বাচিপের নতুন কমিটির সভাপতি ডা: জামাল ও মহাসচিব ডা: মিলন
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডা: জামালউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা: কামরুল হাসান মিলনকে মহাসচিব করে গতকাল সন্ধ্যায় নতুন কমিটি ঘোষণা করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নাম ঘোষণার আগে ডা: ইকবাল আর্সলান ও ডা: এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন স্বাচিপের আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement