২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে সারা দেশে গায়েবি মামলার হিড়িক!

-

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে সারা দেশে একের পর এক গায়েবি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়েছিল একইভাবে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকায় সমাবেশের আগে একের পর এক গায়েবি মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে বিএনপির ল’ সেল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি গত তিন দিনে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০টি গায়েবি মামলা করা হয়েছে বলে দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান।

আইনজীবীরা জানিছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের আগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় শত শত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ এবং একই ধরনের ঘটনা দেখিয়ে এসব গায়েবি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার অভিযোগ, ভাষা ও বাক্য একই ধরনের। শুধু বাদি-বিবাদি ও স্থানের নাম আলাদা। আর সব মামলার বাদি পুলিশ।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা এসব মামলা গায়েবি মামলা বলার কারণ সম্পর্কে আইনজীবীরা বলেন, বিভিন্ন স্থানে কোনো ঘটনা ঘটুক আর না ঘটুক কিছু লোকের নাম দিয়ে অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এই মামলায় গ্রেফতার দেখাতে পারে সরকার যে ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এই রকম। আর একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অজ্ঞাতনামা মামলা করা হলেও এই এলাকার সব অধিবাসীসহ সারা দেশের যেকোনো মানুষকে এ মামলার আসামি করা সম্ভব।

রাজশাহী জেলার পাঁচটি থানায় ১৫ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে দায়ের করা পাঁচটি মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মামলাগুলোর প্রতিটির এফআইআরের ভাষা এবং বাক্য একই ধরনের। শুধু বাদি-বিবাদি ও স্থানের নাম আলাদা। গত ১৭ নভেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সরকারি স্থাপনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গোদাগাড়ী থানাধীন গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সরমংলা গ্রামস্থ হেলিপ্যাড মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে সমবেত হয়েছে। এ মামলার বাদি একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং এ মামলায় পাঁচজনকে আসামি করে ১৮০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়েছে। অন্য দিকে বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও মোহনপুর থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের করা মামলার অভিযোগে একই স্থাপনা অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সরকারি স্থাপনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া মামলাগুলোর ভাষা ও বাক্য একই ধরনের। শুধু বাদি-বিবাদি ও স্থানের নাম আলাদা। আর সব মামলার বাদি পুলিশ বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী থেকে এসব গায়েবি মামলা জামিন নিতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও মোহনপুর- এ পাঁচটি থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা হয়েছে। পুঠিয়া থানা ও দুর্গাপুর থানায় করা মামলায় ১৬ জন করে আসামি এবং অন্য তিনটি থানায় ছয়-সাতজন করে আসামি করা হয়েছে। তবে পাঁচটি থানায় করা মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার মিলন আরো জানান, মামলাগুলোর এফআইআর পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি এফআইআরের ভাষা ও বাক্য একই ধরনের। শুধু বাদি-বিবাদি ও স্থানের নাম আলাদা। আর সব মামলার বাদি পুলিশ। সুতরাং বিশেষ এবং হয়রানি করার উদ্দেশ্যে রাজশাহীর পাঁচটি থানাসহ এই গায়েবি মামলাগুলো করা হয়েছে। বাস্তবে আসামিরা ওই সব অপরাধের সাথে জড়িত নন। গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে এসব গায়েবি মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।


এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবীর ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বর্তমান এই অনির্বাচিত সরকার এসব গায়েবি মামলা দায়ের করে দেশকে একটি পুলিশের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পুলিশ বাহিনীকে আজ জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এই অবৈধ সরকার। যদিও অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এসব অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান বহির্ভূত কার্যক্রমের সাথে জড়িত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এসব গায়েবি মামলা দিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। এ দেশের মুক্তিকামী জনগণ আজ জেগে উঠেছে তারা এই অবৈধ সরকারের পতন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করে ঘরে ফিরবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের আগে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, অর্থাৎ পুলিশকে দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি প্রত্যাশা করব সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ ধরনের প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখবে এবং গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনো প্রতিবন্ধকরা সৃষ্টি করবে না।

তিনি বলেন, গায়েবি মামলা বলছি এই কারণে যে বিভিন্ন স্থানে কোনো ঘটনা ঘটুক আর নাই ঘটুক কিছু লোকের নাম দিয়ে অজ্ঞতনামা ৪০০, ৫০০, ৩০০, ২০০, ২০, ৩০ জনকে আসামি করা হচ্ছে। যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এই মামলায় গ্রেফতার দেখাতে পারে সরকার যে ওই অজ্ঞাতনামা নামা ব্যক্তি এই রকম। তিনি আরো বলেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অজ্ঞাতনামা মামলা করা হলেও এই এলাকার সব অধিবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে এ মামলার আসামি করা সম্ভব। এই অজ্ঞাতনামা আসামির নাম করে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সরকার বিরোধীদের হয়রানি করা, অপদস্ত করা এবং তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement