২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমাবেশ সফলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ বিএনপির

সিলেট বিভাগেও পরিবহন ধর্মঘট
-

নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তিদাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শনিবার সিলেট বিভাগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ দিকে সিলেট বিভাগে ধর্মঘট ডেকেছে বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি। মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক সমিতি। এ ছাড়া হবিগঞ্জে আজ শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আওতাধীন সব যান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতেই সরকারি দলের ইন্ধনে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা মহাসমাবেশ সফল করতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছেন, সব বাধা উপেক্ষা করেই এ গণসমাবেশেও মানুষের ঢল নামবে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে বাস মালিক সমিতির নেতারা দাবি করেছেন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। তবে এই ধর্মঘটে গণসমাবেশ দমে যাবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সব বাধা উপেক্ষা করে গণসমাবেশ সফল করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে বিএনপি।
জানা যায়, শুধুমাত্র সিলেট জেলায় ধর্মীয় সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর ইজতেমার কারণে কাল ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। আর মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে দুই দিনের অর্থাৎ আজ ও কাল ধর্মঘট আহ্বান করেছে মালিক সমিতি। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ইজতেমার দিন কোনো ধর্মঘট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: মঈনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করার বিপক্ষে তারা।

পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দুই দিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিকপক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।

আজ ও কাল মৌলভীবাজারে ডাকা হয়েছে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির এ ধর্মঘটে বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন। বুধবার রাতে এই ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার বাস মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ।

এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আজ ও কাল সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। অপর দিকে হবিগঞ্জে আজ সকাল থেকে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আওতাধীন সব বাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করিয়েছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই গণজমায়েতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, কালকের সমাবেশকে ঘিরে সিলেটে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ বরাবরের মতোই পদক্ষেপ নিবে।

অলিখিত বাকশাল চলছে : মঈন খান
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে যেখানে গণতন্ত্র নাই। তারা একদলীয় শাসন কায়েম করছে। অতীতে তারা বাকশাল কায়েম করেছিল। এবার অলিখিত ভাষায় একদলীয় হয়ে কাজ করতে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।

গতকাল বিকেলে সিলেট নগরের আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থল পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. মো: এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হোসেন জীবন, কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক জালালী পংকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কুলাউড়ায় বিএনপি নেতা আবেদ রাজা অফিসে অবরুদ্ধ
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, সিলেটে বিএনপির সমাবেশে লংমার্চ করে যাওয়ার জন্য কয়েক শ’ নেতাকর্মী গতকাল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও টিশার্ট পরে কুলাউড়া বিএনপির অফিসে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার আহবানে। কিন্তু পুলিশ বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করে রাখে এবং বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের মারমুখী আচরণে এবং প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখায় লংমার্চ স্থগিত করে নিজ নিজ উদ্যোগে সিলেটের সমাবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে জানান আবেদ রাজা।

দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আবেদ রাজা বলেন, বিএনপি উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার নেতাকর্মীদের আগামীকাল সিলেটের সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং ব্যাপক সাড়া মিলে। গতকাল লংমার্চ করে সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ উপজেলা সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাচ্ছুকে আটক করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, শ্রমিকদল সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বুলু, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক কামরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহমান, উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ : ডা: শাখাওয়াত
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা সিলেট থেকে জানান, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিএনপির প্রতিটি গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। সব বাধা-বিপত্তি ও হুমকি ধমকি উপেক্ষা করে জনতার স্রোত এসে মিশবে আলিয়া মাদরাসা মাঠে। ফলে আগামীকাল সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। গতকাল শেষ বিকেলে সিলেটের ঐতিহাসিক আলীয়া মাদরাসা মাঠ পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

ইতোমধ্যে গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, মহিলাদলসহ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। দলের দায়িত্বশীলরা সমাবেশকে কেন্দ্র করে অব্যাহত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সমাবেশস্থল নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে মঞ্চ নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সিলেটের গণসমাবেশ কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলাসহ উপজেলা পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সমাবেশ সফল করতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি বৈঠক, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন। এতে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ব্যাজ বিক্রি করতে শরীয়তপুরের মামুন সিলেটে : গণসমাবেশ সামনে রেখে আশপাশ এলাকায় চলছে সাজ সাজ রব। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, এ গণসমাবেশে চার লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। এর আগেই সমাবেশস্থলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সেখানে বিএনপির লোগো ও ধানের শীষের প্রতীকসংবলিত ব্যাজ, কোট পিন ও মাথায় বাঁধার ফিতা বিক্রি করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন কয়েক তরুণ।

গতকাল সকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে এসেছেন মামুন খান। সমাবেশস্থলের মূল প্রবেশপথের কাছে বিএনপির ব্যাজের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন তিনি।

শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে কোট পিন, ব্যাজ ও ফিতা নিয়ে এসেছেন মামুন খান। এর আগে তিনি ফরিদপুর, খুলনা, বরিশালসহ বিএনপির অন্যান্য গণসমাবেশ স্থলে গিয়ে পণ্যগুলো বিক্রি করেছেন। এসব পণ্য ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন তিনি। বিকেলে আলিয়া মাদরাসা মাঠে কথা হয় তার সাথে।
মামুন খান বলেন, ফরিদপুরে ৩০ হাজার টাকার মতো বেচাবিক্রি হয়েছে। সিলেটেও ভালো বিক্রি করতে পারবেন বলে তার আশা। কোট পিনগুলো ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। মাথায় বাঁধার ফিতা ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন। গত বুধবার সিলেটে এসেছেন তিনি। এক দিনে তিনি প্রায় এক হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।
মানিকগঞ্জ থেকে কোট পিন নিয়ে আসা মো: উজ্জ্বল বলেন, তিনি নিজে বিএনপির সমর্থক। মূলত সমাবেশে যোগ দিতেই তিনি এসেছেন। সেই সাথে ঢাকা থেকে কিছু সামগ্রী এনেছিলেন। সেগুলো পাইকারি দামে বিক্রি করছেন।

সমাবেশের মাঠে কোট পিন ও মাথায় বাঁধার ফিতা কিনছিলেন যুবদল নেতা সাবের রহমান। তিনি বলেন, সমাবেশ স্থল ছাড়া এগুলো পাওয়া যায় না। তাই তিনি কিনে নিচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement