২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদ্যুৎহীন সারা দেশ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারা দেশের মতো অন্ধকারে নিমজ্জিত রাজধানী। গতকাল সন্ধ্যায় পল্টন মোড় থেকে ছবিটি তুলেছেন নাসিম সিকদার -

-জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়
-চরম ভোগান্তিতে মানুষ
-দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন


বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইন বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে সারা দেশ। জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। একই সাথে ভোলা ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এভাবে বেলা ২টা ৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় দেশের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন থাকে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) রাজধানীর অর্ধেক এলাকা বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
এ দিকে বিদ্যুৎ ছাড়া সারা দিনের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। গরমের সাথে সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে আসায় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বাসাবাড়িতে ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে। একপর্যায়ে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় মোমবাতি উধাও হয়ে যায়। সামর্থ্যবানরা থেমে থেমে জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে দেখা যায়। তবে একপর্যায়ে জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে গেলে পেট্রলপাম্পগুলোতে তেলের জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়। মোবাইলের লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দোকান, মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। এমনকি দেশের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও বিদ্যুৎবিহীন থাকতে দেখা যায়। রেলস্টেশনে ই-টিকিট দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়ে মোবাইল-ইন্টারনেট গ্রাহকেরা। মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিলে। বেড়ে যায় কলড্রপ। ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। একই সাথে দুর্ভোগ দেখা দেয় সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। সবমিলেই গতকাল এক অস্বস্তি দুর্ভোগ এবং গরমের মধ্যে অসহনীয় অস্থিরতায় পার করে দেশের মানুষ।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে ধৈর্য ধারণের জন্য অনুরোধ করেন। একই সাথে তিনি জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি কমিটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে।


দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নানা কারণে বিদ্যুতের গ্রিডে বিপর্যয় হতে পারে। এই গ্রিড বিপর্যয় এক সেকেন্ডের জন্য হলেও তা পুনরায় চালু করার বিষয়টি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। এ দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পিজিসিবির দক্ষ প্রকৌশলীরা দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ ফেরাতে নিবিড়ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দ্রুত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যাবে বলে আশাবাদী তারা। পিজিসিবি বলছে, গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ ও সূত্রপাত কোথায় হয়েছে, তা জানা যায়নি। আপাতত দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালুর চেষ্টা চলছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টায়) রাজধানীর সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি।
জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বৃহৎ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার কিছু সময় পর এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে বিপর্যয় ঘটেছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। আমাদের টিম অলরেডি কাজ শুরু করেছে।’
তিনি জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহের বড় এলাকা এই বিপর্যয়ের কবলে পড়ে, পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের আরো কিছু এলাকায় আংশিক বিদ্যুৎ চলে যায়।
তিনি বলেন, ‘এক এলাকায় সমস্যা হলে সেটা অন্য এলাকাকেও আক্রান্ত করে। তবে কোনো অঞ্চল থেকে সমস্যার সূত্রপাত, সেটা টেকনিক্যাল কারণে আমরা এখনই বলছি না।’
প্রসঙ্গত এক মাস আগেই জাতীয় গ্রিডের আরেকটি সঞ্চালন লাইনের বিভ্রাটে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে।
বারবার কেন সমস্যা হচ্ছে- এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণেই এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ওভারলোডের কারণে সমস্যা হয়নি। তবে আরো কোনো কারণ আছে কিনা তা বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় প্রয়োজন।’
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ নেই মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে। চট্টগ্রামও বেলা আড়াইটার পর থেকে বিদ্যুৎহীন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যা জানতে পেরেছি ন্যাশনাল গ্রিডের ইস্টার্ন জোনে বিপর্যয় হয়েছে। তবে সমস্যা ঠিক কোথায়, সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি।’ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় আরেক কর্মকর্তা জানান, তাদের পুরো বিভাগেই বিদ্যুৎ নেই। ‘সমস্যাটা জাতীয় গ্রিডে। তারা কাজ শুরু করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’


গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে মৌলভীবাজারেও দুপুর থেকে বিদ্যুৎ নেই বলে জানিয়েছেন পিডিবির জেলা কার্যালয়ের একজন প্রকৌশলী।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহ উত্তর অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বেলা ২টা থেকে তার এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। সমস্যা মিটতে সময় লাগবে বলে তারা জেনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যাটা আমাদের এখানে না। তবে গ্রিড ফেইল করেছে।
সমস্যার সমাধানে জাতীয় গ্রিডে কাজ চলছে জানিয়ে পিডিবির উপপরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, ৮-৯টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করতেও কিছুটা বিদ্যুৎ লাগে। আবার কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাথে সাথে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রেখে অথবা অন্য কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে ‘লোড’ সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা করা না গেলে অর্থাৎ লোড সমন্বয় না হলে অন্য কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ে।
এভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর নতুন করে কোনো কেন্দ্র বন্ধ হলে সরবরাহে ঘাটতি আরো বাড়ে এবং একইভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত এর আগেও সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছিল। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দিলে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে। ওই ঘটনায় পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (সিস্টেম অপারেশন) বি এম মিজানুল হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল, তা আর জানানো হয়নি।


এরও আগে কালবৈশাখী ঝড়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২০১৭ সালের ২ মে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষকে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়।
তার আগে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে ভারতের সাথে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎকেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়।
এ দিকে গতকাল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, আকস্মিকভাবে গতকাল বেলা ২টা ৪ মিনিট থেকে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ন অংশে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) সমস্যা দেখা দেয়ায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রকৌশলীগণ দ্রুততার সাথে জাতীয় গ্রিড সচল করতে নিবিড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎসেবা চালু করা হবে বলে আশা করা যায়। পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ খাতের সব সংস্থা একযোগে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত
এ দিকে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত হচ্ছে। মোবাইল থেকে কল, এসএমএস ও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানায়।
টেলিকম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক চালু রাখা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় জেবারেটর দিয়ে চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে এমটব জানায়, জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক সময়ের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। এই সাময়িক পরিস্থিতির জন্য আমরা দুঃখিত।


বিটিআরসির হিসেবে দেশে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ৪০ লাখের বেশি। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটির বেশি।
এমটব বলছে, বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে টেলিযোগাযোগ সেবাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৭টা ৩০ মিনিট) বিদ্যুৎ বিভ্রাট পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল।
কমলাপুরে টিকিট বিক্রি বন্ধ
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এ থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনেও যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হয়। যদিও বিকল্পভাবে জেনারেটরের মাধ্যম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে টিকিট বিক্রির কাজ সচল রাখা হয়।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনে বিকল্পভাবে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তাই, বিদ্যুৎ যাওয়ার পর থেকে জেনারেটর চলছিল স্টেশনে। কিন্তু এর মধ্যেও বিকেল ৪টা থেকে ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত কাউন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে এই ২৫ মিনিটে কোনো টিকিট বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
এতে, কাউন্টারে টিকিট নিতে আসা ব্যক্তিরা অধৈর্য হয়ে পড়েন। পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক হলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবারো টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়।
সূত্র জানায়, জেনারেটরের তেল শেষ হয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে আকস্মিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আশুগঞ্জে ৫টি ইউনিট বন্ধ
আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান জাতীয় গ্রিড লাইনে ত্রুটির কারণে গতকাল আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল) চালু পাঁচটি ইউনিটের উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ৭০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিকেল সাড়ে ৫টায় এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেছে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিটগুলো চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। কখন এসব ইউনিট পুনরায় চালু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ দিকে জাতীয় গ্রিডের সমস্যা কোথায় এবং কোন ধরনের সমস্যা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।


এপিএসসিএল ও পিজিসিবি সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিড লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে এপিএসসিএল-এর আওতাধীন চালু থাকা ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (নর্থ ও সাউথ), ২২৫ মেগাওয়াওয়ট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ২০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্ট এবং ৫৩ মেগাওয়াটের গ্যাস ইঞ্জিন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে (নর্থ) প্রায় ৩২০ মেগাওয়াট, ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে (সাউথ) প্রায় ১৭৩ মেগাওয়াট, ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে ১৭০ মেগাওয়াট, ২০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেডে ৮ মেগাওয়াট এবং ৫৩ মেগাওয়াটের গ্যাস ইঞ্জিন থেকে প্রায় ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এ কারণে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনসহ পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে সাড়ে ৫টা) উপজেলার কোনো অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি এবং কোনো ইউনিটও চালু করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে গ্রিড লাইনের কোথায়, কী ধরনের সমস্যা হয়েছে তা সঠিকভাবে জানাতে না পারলেও গ্রিড লাইন চালুর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement