২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশে ভুল স্বীকার রাশিয়ার

ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি শুক্রবার
-

ইউক্রেনে লড়তে রিজার্ভ সৈন্যদের ডাকার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে ক্রেমলিন। সেনাসমাবেশ নিয়ে রাশিয়ার ভেতরেই ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র এ ত্রুটির কথা স্বীকার করে নেন। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘ডিক্রি লঙ্ঘনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। সব ত্রুটি ঠিক করে নেওয়া হচ্ছে।’ বিবিসি।
ডিক্রিতে কেবল সামরিক বাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রিজার্ভ সদস্যদের ডাকার কথা থাকলেও একাধিক খবরে বাহিনীতে কাজের অভিজ্ঞতা নেই, বেশি বয়সী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও ডাকা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে পুতিন আংশিক সেনাসমাবেশের নির্দেশ দেয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানান, তারা রিজার্ভ থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ লোককে ডাকবেন। ক্রেমলিনের মূল ওয়েবসাইটে পুতিনের ডিক্রির যে সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে রিজার্ভ থেকে কত সৈন্য নেয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না থাকায় সরকারবিরোধী একাধিক গণমাধ্যমের খবরে ১০ লাখের মতো সৈন্য নেয়া হতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়। এরপরই রাশিয়ার বিভিন্ন অংশে সৈন্য সমাবেশবিরোধী প্রতিবাদ দানা বাঁধে।
ইউক্রেন ও পশ্চিমা একাধিক দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত মাসের ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যে ব্যাপক মার খেয়েছে, রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের ডাক তা-ই দেখাচ্ছে। সেনাসমাবেশের নির্দেশ দেয়ার পর রাশিয়াজুড়ে হওয়া বিভিন্ন বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।


সোমবার এক ব্রিফিংয়ে পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ তাদের প্রক্রিয়ায় কিছু ভুল থাকার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি শুধরে নিতে কিছু অঞ্চলের গভর্নররা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।’ দেশের কোথাও জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে কিনা কিংবা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে অবগত নন বলেও জানান ক্রেমলিনের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সেনাসমাবেশ নিয়ে জনগণের একাংশের ক্ষোভের সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে সোমবার সাইবেরিয়ার শহর উসৎলিমস্কে, সেখানে এক ব্যক্তির ছোড়া গুলিতে সেনাবাহিনীর এক রিক্রুটমেন্ট কর্মকর্তা গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ফুটেজে হামলাকারীকে ওই কর্মকর্তার দিকে এগিয়ে যেতে এবং তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। বন্দুকধারী ধমকের সুরে আশপাশের লোকজনকে পালিয়ে যেতে বলার পর ভবনের ভেতর থাকা অনেকে আতঙ্কে চিৎকার করেন ও দৌড় দেন। গত কয়েক দিন উত্তর ককেশাসে রাশিয়ার দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রে সেনাসমাবেশ নিয়ে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনী দাগেস্তানের রাজধানী মাখাচকালা থেকেই শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা সংগঠন ওভিডি-ইনফো।
রাশিয়াজুড়ে একাধিক সেনা রিক্রুটমেন্টে কেন্দ্র ও প্রশাসনিক ভবনে অগ্নিসংযোগেরও খবর পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর আগে রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তের কাছে এক লাখ ৯০ হাজারের মতো সেনা জড়ো করেছিল।


ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি শুক্রবার
রয়টার্স ও আলজাজিরা জানায়, রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও মস্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে গণভোট শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এসব অঞ্চল নিয়ে আগামী শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণা আসতে পারে। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রুশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে। সেখানেই তিনি ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ান ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিতে পারেন।
২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভোট শুরু হয় ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশে। রাশিয়ার সাথে যুক্ত হতেই এই ভোটের আয়োজন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টুইটারে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আরো জানায়, এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে চলমান গণভোট ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ‘রাশিয়ার নেতারা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আশা করেন যেকোনো যোগদানের ঘোষণাকে বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রমাণ হিসেবে দেখা হবে। একই সাথে সঙ্ঘাতের জন্য দেশপ্রেমিক সমর্থনকে একীভূত করবে এটি।’
এ দিকে গণভোটের শেষ দিনে ইউক্রেন ও রুশ সেনাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে রুশ-সমর্থিতরা শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশে গণভোটের ঘোষণা দেয়, যা ইউক্রেনের প্রায় ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড বা হাঙ্গেরির আয়তনের সমান এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার মাটি রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি জারি করেছেন। যেখানে গণভোটে জয়ী হলে এই চারটি অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত হবে। শিগগিরই এই গণভোট রাশিয়ার পার্লামেন্টও অনুমোদন দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এই গণভোটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গড়িয়েছে সাত মাসে। দুইপক্ষের লড়াইয়ে প্রাণ গেছে বহু বেসামরিক লোকের। নিহত হয়েছেন নারী ও শিশুরাও। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আরো কয়েক লাখ ইউক্রেনীয়। এই যুদ্ধের কারণে বেসামাল গোটা বিশ্বের অর্থনীতি।
পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার দাবি : এ দিকে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে মস্কোর। যদি রাশিয়া তেমন পরিস্থিতিতে পড়ে তবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি ধাপ্পাবাজি নয় বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। খবর আল জাজিরার।


গত সপ্তাহে এক সেনা সমাবেশে পুতিনের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই যেন শোনা গেল মেদভেদেভের কণ্ঠে। বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মেদভেদেভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অনেক বিষয়ে আলোচনা ছাড়াই প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে মস্কোর। পশ্চিমাদের কাছে মেদভেদেভ একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব যিনি নিয়মিত পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইউক্রেন সম্পর্কে আক্রমণাত্মক বিবৃতি প্রদান করে থাকেন। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন তা ধাপ্পাবাজি বলে উড়িয়ে না দিয়ে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। জোসেফ বোরেল বলেন, রুশ নেতা ও সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ার পর ইউক্রেনের যুদ্ধ একটা বিপজ্জনক মুহূর্তে পৌঁছেছে। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেন বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের মুখে রণাঙ্গনে রুশ বাহিনী কিছুটা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। বোরেল বলেন, রুশ সৈন্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় অবশ্যই পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছে ও এর প্রতিক্রিয়ায় পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন তা খুবই খারাপ।
যুদ্ধের সাত মাসের মাথায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের সৈন্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও বোরেল বলছেন সমস্যার একটা কূটনৈতিক সমাধান এখন জরুরি। তিনি বলেন, এমন একটা সমাধান যেটা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, নাহলে যুদ্ধ হয়তো থামবে, কিন্তু শান্তি আসবে না ও আবার যুদ্ধ হওয়ার হুমকি থেকে যাবে। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক বিরল ভাষণে পুতিন বলেন, তার দেশের হাতে বিধ্বংসী নানা ধরনের মারণাস্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের হাতে যেসব অস্ত্রসম্ভার রয়েছে তার সবই আমরা ব্যবহার করবো। ওই ভাষণে পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য রিজার্ভ সৈন্য তলবেরও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, তিন লাখ রুশ যারা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের তলব করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement