২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না : ফখরুল

রাজধানীতে যুবদলের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর নয়া পল্টনের সামনে গতকাল শনিবার বিকেলে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় জেলে দেবেন, কথায় কথায় আগুন জ্বালিয়ে দেবেন এ দেশের মানুষ তা আর সহ্য করবে না। এক শাওনের মৃত্যুতে, রহিমের বা নুরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে সেই অভ্যুত্থান বন্ধ করা বা দমন করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আজকে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সবাই জেগে উঠেছে। আমি আহ্বান জানাতে চাই এই দেশকে রক্ষা করার জন্য, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি না, ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি বাংলাদেশের জনগণকে। কারণ এ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করি, সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করি। যেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করি, পরাজিত করে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করি। তিনি বলেন, আমাদের পরিষ্কার কথা এখনো সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিন এবং সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।
মুন্সীগঞ্জে পুলিশের হাতে মীরকাদিম যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী যুবদল এই সমাবেশ করে। সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।


মির্জা ফখরুল বলেন, শাওনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হত্যা করেছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। আজকে সকালে যখন পত্রিকা দেখছিলাম, সেই পত্রিকায় শাওনের ৭ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা, তার পিতা ও স্ত্রীর ছবি দেখার পরে আমাদের আর এই জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের রাজপথে নেমে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এই সরকারকে সরাতে হবে। শাওন নয়, এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর চারজন সন্তানের রক্ত নিয়েছে শেখ হাসিনা।


যার ছেলে মারা গেছে সে বুঝবে কষ্ট কী : শাওনের বাবা ছোয়াব আলী ভূঁইয়া সমাবেশে বলেন, আমার মৃত ছেলের নামে মামলা করা হয়েছে। এটা কিভাবে হয়? আমরা কোন দেশে বাস করি। আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে মিছিলে গেছে তাকে গুলি করে মারছে। আমি আপনাদের কাছে বিচার চাই, যারা আমার ছেলেকে গুলি করে মারছে তাদের বিচার করে দেবেন। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে সমস্যা, বাড়িতে একজনে আমাকে হুমকি দিচ্ছে, বলছে মামলা করব। আমি ভয়ে আছি। আমি আপনাদের কাছে একটা কথা বলি যে, আমার নিরাপত্তা কে দেবে। তিনি বলেন, সবাই দোয়া করবেন আমার ছেলের জন্য। আপনারা বুঝবেন না কি কষ্ট। যার ছেলে মারা গেছে সে বুঝবে কী কষ্ট?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পরিবারের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাওনের বাবা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ভোলা থেকে মুন্সীগঞ্জ চারজন শহীদ হয়েছেন। আজকে একজন বাবার আকুল আর্তনাদ আপনারা শুনেছেন। বাংলাদেশের বহু এলাকা থেকে বহু কর্মীকে গুম করা হয়েছে, বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে-সবাইকে আপনাদের সামনে হাজির করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। আজকে একজন বাবাা তার সন্তানের জন্য বিচার চাইলেন। জনতার কাছে এই বিচার চেয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে বিচার চান নাই। কারণ এই সরকার বিচারহীনতায় বিশ্বাস করে।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহিন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বিএনপির ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, মীর আলী নেওয়াজ, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না : ‘বিশ্বে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না’- এই কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না বলে গতকাল আরেকটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আজকে বড় বড় কথা বলছেন বিদেশে গিয়ে। মার্কিনিদের ওখানে গিয়ে বলছেন, যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটা মানায় না। তিনি নিজে এ দেশে হত্যার সাথে জড়িত। সরকার হত্যাগুলো করছে। গুম হয়ে গেছে ৬ শতাধিক।
মুক্তিযুদ্ধকে তারা পুরোপুরি বিকৃত করছে : মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করেছে। শুধু আংশিক নয়, পুরোপুরিভাবে একটা ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল এক দিনে নয়, দীর্ঘ কাল ধরে সংগ্রাম হয়েছে স্বাধীনতার জন্য, স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতার অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। ওই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় স্মারক ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি তার রাজনীতির শুরুটা করেছিলেন ফুল দিয়ে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা যে, সজীব ওয়াজেদ জয় (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে) যখন দেশে এসেছিলেন এবং যিনি আওয়ামী লীগের প্রথম সভায় যোগ দিয়েছিলেন তখন তার কাছে ফুল দিয়ে উপহার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ এই যে সমঝোতার রাজনীতি, গণতন্ত্রের যে সহনশীলতা তার নতুন দৃষ্টান্ত তিনি শুরু করেছিলেন।
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্যসচিব আবদুস সালাম, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সোহরাব উদ্দিন, শামসুজ্জোহা মেহেদী, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement