২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানের মারে ছেলের মৃত্যু, বাবা আহত

ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগ
-

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই ফরহাদ হোসেন শাহ (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২১) মারধরে গুরুতরভাবে আহত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির পর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দুপুরে আহত ফরহাদ হোসেন শাহের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদি হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ও অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনের নামে নলডাঙ্গা থানায় তার স্বামী-সন্তানকে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন। সোমবার রাতে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারসংলগ্ন চারমাথা মোড়ে এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত ফরহাদ হোসেন শাহ ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে এবং নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজের আপন ভাই। নিহত জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। দেড় বছর আগে বিয়ে করা জামিউল আলীম জীবনের তিন মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভেতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে চুরির সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান সালিসি বৈঠক বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জামিউল আলিম জীবন আমতলী বাজারসংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। একপর্যায়ে তার সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে কথাকাটাকাটি শুরু হয় এবং চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজি এবং তার লোকজন জীবনকে কিল ঘুষিসহ মারধর করতে থাকে। খবর পেয়ে তার বাবা ফরহাদ হোসেন ছেলেকে ছাড়াতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করতে থাকে চেয়ারম্যান।
হামলাকারীরা রড, বাঁশের লাঠি ও ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তাদের আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। পরে স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং আহত জামিউল আলীম জীবনকে মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে রাখা হয়।
আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায়ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারধর করেছে।
তার অপর ভাই নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজ বলেন, জামিউল কোনো অপরাধ করে থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে জানাতে পারতেন। কিন্তু সরকারি লোক হয়েও তিনি যে গর্হিত ও অনাকাক্সিক্ষত কাজটি করেছেন তা করা উচিত হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান সামান্য ঘটনায় নিজের আক্রোশ মেটাতে তিন ভাই ও অন্য লোকজন নিয়ে তাদের নির্মমভাবে মারধর করেছে। যার জেরে সদ্য বিবাহিত যুবক জামিউল আলীম জীবন মারা গেল। তিন মাস বয়সী সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেল। আমি দ্রুত চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
নলডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ফরহাদ হোসেন শাহের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদি হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজিসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মারধরের মামলা দায়ের করেছেন। এখন এ মামলাই হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো: আসাদুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের বলেন, জীবন ও তার বাবা নেশাখোর। জীবন ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা বিষোদগার করেছেন। তাকে ডেকে এনে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন পেছন থেকে চেয়ারম্যানকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। এমন সময় আত্মরক্ষা করতে পাল্টা মার দেয়া স্বাভাবিক বিষয়। তবে মঙ্গলবার রাত ৮টায় জীবনের মৃত্যুর খবর আসার পর বারবার ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement