১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিএনপির সমাবেশে নেতারা

পুলিশ বাহিনী দিয়ে সরকার বিরোধীদের হত্যা করছে

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

নেতাকর্মী হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকার বিরোধীদের আন্দোলন দমনে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। তারা প্রতিনিয়ত নাগরিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে, হত্যা করছে। কিন্তু গুলি চালিয়েও এবার পতন ঠেকানো যাবে না।
গতকাল শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের এই সভা থেকে আমরা দাবি করছি যে, পত্রপত্রিকায় চায়নিজ রাইফেল তাক করা ছবি এসেছে, এই ছবি তদন্ত করা হোক। নারায়ণগঞ্জে যিনি এই রাইফেল নিয়ে পয়েন্ট লাইনে গুলি করেছেন তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে। যদি না দেন আমরাও বসে থাকব না, বসে নেই। ভোলাতে মামলা করেছি, নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের মামলা করব। যতবার আইন ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে আমার ভাইদের ওপর অত্যাচার করবে ততবার মামলা হবে।
চায়নিজ রাইফেলে গুলি করার এখতিয়ার পুলিশের আছে কি না প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে জানাতে চাই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কী কারণে সরকারের পেটুয়া বাহিনী গুলি করেছে এবং আমরা পত্রপত্রিকায় যা দেখেছি সাংবাদিক ভাইয়েরা বলেছেন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছেন ডিবির এসআই কনক।
বলা হচ্ছে, এই এসআই কনকের চায়নিজ রাইফেল রাখার কোনো এখতিয়ার ছিল না। তাহলে এই চায়নিজ রাইফেলটা এলো কোত্থেকে? কোন আদেশ বলে সে গুলি করল আমার ভাইকে। পুলিশকে কি সেই এখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, একজন মানুষ বিনা কারণে পুলিশ গুলি করে হত্যা করবে? সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কে?।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলতে পারে মামলায় কী হবে? মামলায় হয়, মামলায় খুবই হয়। আজকে দেখুন পুলিশের আইজি আমেরিকায় গেছেন এবং শর্তসাপেক্ষে গেছেন, শর্ত মেনে যেতে হয়েছে। সেখানে তাকে (আইজি বেনজীর আহমেদ) বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট এলাকা জাতিসঙ্ঘের ক্যাম্পাসের বাইরে তুমি যেতে পারবে না। এটা লজ্জা আমাদের জন্য, স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য। আজকের পৃথিবীতে যারাই অত্যচার করেছে, নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের কেউই রক্ষা পায়নি। কিন্তু এদের তো লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই। গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুবদলের কর্মী শাওন প্রধানের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে নেতারা বক্তব্য রাখেন।
‘একাই নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে’ : বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১০/১২ দিন যাবৎ আমাদের প্রত্যেকটা সমাবেশ ও কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছিল। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, চাল-ডাল-তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছিলাম। সেখানে ভোলাতে তারা দুইজনকে হত্যা করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তারা তিনজনকে হত্যা করেছে এবং মামলায় আসামি সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেই আগের কায়দায়, গায়েবি মামলার কায়দায় এবং এই মামলা দিয়ে হামলা করে, আহত করে পঙ্গু করে আবার তারা বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায় এবং মাঠে থেকে তারা একাই নির্বাচন করতে চায়।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা কি এই ভাইয়ের (শাওন প্রধান) হত্যার প্রতিশোধ নেবো না? আমরা কি আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, নির্যাতন করছে তার প্রতিশোধ নেবো না? অবশ্যই আমরা আমাদের অধিকারকে রক্ষার জন্য, আমার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেবো না। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, জনগণের কাছে ক্ষমা নিয়ে পদত্যাগ করে আপনারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার জানে, কোনো পরিস্থিতিতেই এই সরকার আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, আজকেও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানায় মিছিল হয়েছিল সেখানে গুলি করেছে, শতাধিক আহত হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এভাবে আমাদের নেতারা গুলি খেতে শিখেছে, মার খেতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে। ইনশা আল্লাহ শেখ হাসিনা টিকে থাকার ক্ষমতা নেই, টিকে থাকতে পারবে না। এই সরকারকে সরাতে হলে আমাদের যা করা দরকার আমরা তাই করব।
স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে দেশের জনগণকে রক্ষা করা, তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা করা।
মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, কামারুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিনের ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, নারায়ণগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement