১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু

আগস্টের ১৭ দিনেই ১৫১৪ আক্রান্ত মৃত্যু ৭
রাজধানীর হলি ফেমিলি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী : নয়া দিগন্ত -

হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই আক্রান্ত হয়েছে ৮১ জন। আগস্টের ১৭ দিনের ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত জুলাই মাসের ৩১ দিনের আক্রান্তের প্রায় সমান। আগস্টের ১৭ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫১৪ জন। অপর দিকে জুলাই মাসের ৩১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল এক হাজার ৫৭১ জন। আগস্টের ১৭ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। জুলাই মাসের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অন্য দিকে জুন মাসে মারা গেছেন একজন। অর্থাৎ চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভাইরোলজিস্ট ও মেডিসিনের চিকিৎসকরা বলছেন, আগস্টের ৩১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা জুলাইয়ের ৩১ দিনের আক্রান্তের দ্বিগুণ হতে পারে। তারা বলছেন, ঢাকায় মশানিধনের প্রতি আরো বেশি জোর দিতে হবে। শুধুমাত্র লোকদেখানো মশকনিধনের কাজ না করে প্রকৃতপক্ষে যেখানে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা ডিম ছেড়ে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে সেখানে ওষুধ ছিটাতে হবে যেন বয়স্ক মশা, লার্ভা ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

মৌসুমির বায়ু অনিয়মিত প্রবাহের কারণে বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প থেকে যে মেঘ হয় তা থেকে বৃষ্টি হওয়ার মতো যথেষ্ট পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। একবার বৃষ্টি হলে অনেক দিন পর আরেকবার বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু মশার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ কারণে আগস্টে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার উৎপাদন বেড়ে গেছে। অন্য দিকে মশকনিধনে শহর কিংবা গ্রামে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে লার্ভা থেকে পূর্ণ মশা হতে পারছে। এসব কারণে চলতি আগস্টে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা বেড়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছিল এবার ডেঙ্গু মশার আধিক্য থাকবে। পূর্বাভাস দিলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশানিধনে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি বলে মনে ঢাকার অনেকেই।

গতকাল যে ৯৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তারাসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪১৯ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৪৭ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৫৭ জন। ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের অবস্থা করোনাভাইরাস আক্রান্তের মতোই। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যেমন সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকায়। অন্য দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই ঢাকায়। ঢাকায় খুবই স্বল্প পরিসরে অনেক বেশি মানুষ বাস করে বলে ঢাকায় ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে চার হাজার ১৭৪ জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিন হাজার ৪৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৬৯৮ জন। অর্থাৎ ঢাকা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তেরও হটস্পটে পরিণত।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু আক্রান্তের হিসাবটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে শুধু তাদের হিসাব দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বা হচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের হিসাব এখানে নেই। অনেকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ সংক্রান্ত তথ্য দেয় না। আবার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানো হলেও সেখান থেকেও স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো তথ্য পায় না অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতর তথ্য সংগ্রহ করে না।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল