২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার প্রধানের সফরে অবস্থা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ

-

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন বা নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে জাতীয় সংলাপের জন্য জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলের আহ্বানে বাংলাদেশে পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন। তার মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকবে। জাতিসঙ্ঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানা ধরনের বিবৃতি দেবে। আর সরকার তার অবস্থানের যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করবে। এগুলো চলতে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।
নয়া দিগন্তের সাথে গতকাল আলাপকালে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিদেশীরা এসে এসব ব্যাপারে আমাদের উপদেশ দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কিন্তু তাতে এ পর্যন্ত কোনো দিনই কোনো সমাধান হয়নি। মিশেল ব্যাচেলে তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ভালো ভালো কথা বলেছেন, কিন্তু শুধু কথার ওপর ভিত্তি করে সমস্যার সমাধান হয়েছে, এমনটা আমি কখনো দেখিনি।
এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে সরকারই জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর পেছনে হয়তো জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য পদে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উন্নত করার একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভব। তবে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচনের বিষয়টা পুরোপুরি রাজনৈতিক। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কঠোরভাবে দমনের ক্ষেত্রে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও এই কাউন্সিলের নির্বাচনে শ্রীলঙ্কা জিতেছে। এতে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে কোনো দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, কি করেনি, সেটা খুব একটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া হয় না। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের ওপর পর্যালোচনায় চীন ও ভারতের ভূমিকা ছিল দেখার মতো। দেশ দু’টি মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য মিয়ানমারকে রীতিমতো প্রশংসা করেছে। এখানে মূল সিদ্ধান্তটা হয় রাজনৈতিক। এর সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধানের ঢাকা সফরকালেই গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীতে এক সমাবেশে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, গুম, খুনের বিচার ব্যাচেলের কাছে চেয়ে লাভ নেই। কারণ এগুলো বিচারের এখতিয়ার তার নেই। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটা রাজনৈতিক সমাবেশে বলেছেন। ব্যাচেলের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বলেননি। এখানে অডিয়েন্স (দর্শক-শ্রোতা) আলাদা। সরকার ব্যাচেলেকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের জন্য। আর ওবায়দুল কাদেরের অডিয়েন্স ছিল তার দলীয় নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ঘটে। সম্প্রতি ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শ্রীলঙ্কা তার হাইকমিশনারকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে দিল্লি পাঠিয়েছিল। অন্যদিকে একই দিন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ভারতবিরোধী শক্ত একটি বক্তব্য দিয়ে দিলেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এড়াতে জাতীয় সংলাপের জন্য ব্যাচেলে যে প্রস্তাব করেছেন তার কোনো ভবিষ্যৎ আছে কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, তার আগে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার সংলাপে কোনো সমস্যার সমাধান হয়েছিল? তখন তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের সম্পর্ক ছিল। এখন সেটিও নেই। তাহলে কিভাবে হবে? বর্তমানে ওবায়দুল কাদের ও ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় প্রতিদিনই পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। এই অবস্থায় সংলাপ কোনো কাজে আসবে না। স্যার নিনিয়ান দিয়ে শুরু হওয়া রাজনৈতিক সমঝোতার প্রচেষ্টা বাংলাদেশে কখনোই কাজ করেনি। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারবে না।


আরো সংবাদ



premium cement