২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিশুর নিবন্ধনে মা- বাবার নিবন্ধন লাগবে না

বাতিল হচ্ছে জটিল শর্ত, সহজ হচ্ছে জন্মনিবন্ধন

-

ভোগান্তির আরেক নাম শিশুর জন্মনিবন্ধন। জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে যারপরনাই হয়রানি আর পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাবা-মাকে। বেশ কিছু শর্তের কারণে শুধু শিশুর বাবা মা-ই নন, কার্যত ক্ষেত্রে দাদা-দাদীকে তাদের নামের বানান কিংবা জন্ম তারিখের বিভ্রান্তির জন্য দিনের পর দিন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দৌড়াতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধনের জন্য প্রধান দুটি শর্তই ছিল শিশু মা-বাবার জন্মনিবন্ধন আগে করতে হবে। আর এ জন্য তাদের বাবা-মা অর্থাৎ দাদা-দাদীর ভোটার আইডি কিংবা তাদের জন্মনিবন্ধনও করতে হয়েছে।
তবে এখন থেকে জন্মনিবন্ধনের প্রধান দুটি শর্তই বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে হলে বাবা-মায়ের জন্মবিনন্ধন জরুরি নয়। অর্থাৎ বাবা-মায়ের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করেই করা যাবে শিশুর জন্মনিবন্ধন। নতুন করে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর স্বস্তি ফিরেছে অভিভাবকদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জন্মনিবন্ধন করতে মা-বাবার জন্মসনদ বাধ্যতামূলকের নিয়মটি তুলে দিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন)। এখন থেকে মা-বাবার জন্মসনদ ছাড়াই জন্মনিবন্ধন করা যাবে। এখন থেকে হাসপাতালে জন্ম নেয়ার পর দেয়া ছাড়পত্র বা টিকার কার্ড যেকোনো একটি প্রমাণ দেখিয়ে শিশুর জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মির্জা তারিক হিকমত। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সবার জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল যে, যাদের জন্ম ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের পর তাদের বয়স ১৮ না হওয়ায় এনআইডি হয়নি। কাউকে যদি জন্মের পর একটি আইডি দিতে চাই সে ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য। স্কুলে এখন ইউনিক আইডির বিষয়টি প্রচারণা হচ্ছে। সেটি অটোমেটিক হয়ে যেতো যদি বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন থাকতো এবং সেটি যদি সন্তানের জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে থাকে তাহলে ডিজিটালি সেই সন্তান পরিচিত হয়। এটি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড। এ পর্যন্ত যারা সঠিকভাবে জন্মনিবন্ধন আবেদন দিয়েছে তাদের প্রায় ৩০ লাখের বেশি ইউনিক আইডি অটোমেটিক্যালি জেনারেট হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের জন্য বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন দেয়ার বিষয়টি আবেদনে বাধ্যতামূলক থাকলেও সেটি আমরা তুলে দিয়েছি। ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের টিকা নিতে হলে হয়তো বাবা-মাসহ তিনটি জন্মনিবন্ধন করা লাগতো। সে জন্য এটি তুলে দিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।
উল্লেখ্য ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে জন্মনিবন্ধনের নিয়মে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছিল, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের পর জন্ম নেয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করতে হলে তার বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন সনদ অবশ্যই প্রয়োজন হবে। ওই সময় জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অভিভাবকরা।
সূত্র মতে, স্কুলে ভর্তি কিংবা করোনার টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য সন্তানের প্রয়োজন ডিজিটাল জন্মসনদ। অথচ এই জন্মসনদ সংগ্রহে বাবা, দাদাসহ পরিবারের তিন পুরুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিছু পরিবার আছে যাদের শিশু স্কুলে ভর্তি বা অন্য কোনো প্রয়োজনে এই জন্মসনদ পেতেই যেন গলদঘর্ম অবস্থা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছুটছেন তারা নিকটস্থ ইউনিয়ন বা কাউন্সিলরের অফিসে। অনলাইনে নির্ধারিত একটি ফরমেটে আবেদন করতে হয় বিধায় দুর্ভোগ বা ভোগান্তি কমাতে কর্মকর্তাদেরও কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নেয়ার জন্যও ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন সনদও চাওয়া হচ্ছে। আর এই সনদ না থাকলে তাদের টিকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ এবং ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে। এখন নতুন করে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদেরও টিকা দেয়া হবে। আর সেই কারণেই মূলত সব শিশুরই বাধ্যতামূলক জন্মসনদ প্রয়োজন হচ্ছে।


এদিকে ডিজিটাল জন্মসনদ সংগ্রহের নানা ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারের পর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকে ডিজিটাল জন্মসনদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেশ কিছু নিয়মনীতি শিথিল করার বিষয়েও বেশ কয়েক মাস আগেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ এখন প্রধান দুটি শর্তই শিথিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ২০২১ সলের জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে ভর্তি, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পাসপোর্টের জন্য আবেদনসহ সর্বমোট ১৮টি ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিকদের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র নিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্রে বিদ্যুৎ পানি বা গ্যাস বিলের কপির সাথে পৈতৃক ভিটেমাটির জমির পর্চা কিংবা দলিলপত্রও চাওয়া হচ্ছে। এতে করে যৌথ পরিবারের সদস্যরা যারা নিজেদের নামে জমি ভাগভাটোয়ারা করেননি তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। আবার যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তাদের বাড়ির মালিকের বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিলের কাগজপত্রও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে একাডেমিক কাগজপত্র সংগ্রহ করা কিছুটা সহজসাধ্য হলেও স্থায়ী ঠিকানার কাগজপত্র সংগ্রহে অনেককেই পড়তে হচ্ছে গলদঘর্ম অবস্থায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement