২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড়

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় -

জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে না বাড়তেই এবার সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এখন অজুহাত দেয়া হচ্ছে, টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় দেশে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ৩ আগস্ট ট্যারিফ কমিশনে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তারা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর দাবি জানায়।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ববাজারে সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম দ্রুত কমে যাচ্ছে। গেল জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেলের দাম উঠেছিল এক হাজার ৭৮১ ডলার। গতকাল বৃহস্পতিবার তা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৫৫ ডলারে। কিন্তু দেশের বাজারে সেই তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম খুব সামান্য কমানো হয়েছে। সেটুুকুও খুচরাপর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। শুধু সয়াবিন তেলের দামই নয়, বিশ্ববাজারে পামওয়েলের দামও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। জুনে প্রতি টন পামওয়েলের দাম ওঠেছিল এক হাজার ৩৬০ ডলার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৬ ডলারে।
এদিকে সবশেষ গত ২১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই দাম অনুযায়ী, এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ আছে, আর পাম তেলের দাম ১৫২ টাকা।
তবে এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দিয়ে সংগঠনটি সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দেয়া চিঠিতে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা থেকে ২০৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯১০ থেকে ৯৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও ট্যারিফ কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
শিগগির ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিগগির তারা (ট্যারিফ কমিশন) বসবে। ওরা (তেল ব্যবসায়ী) তো একটা দাবি (প্রতি লিটারে ২০ টাকা বাড়ানো) দিয়েছে, সেটা জাস্টিফাইড কি না, সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে ট্যারিফ কমিশন বসে ঠিক করবে।
পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে রাজধানীতে পণ্যের দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো তদারকি আছে কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তো করবে না। পরিবহন মন্ত্রণালয়- কতটুকু বাড়ার কথা সেটি তারা ঠিক করছে। আরো আলোচনা চলছে, এক্স্যাক্টলি কত হওয়া উচিত।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে বা সমন্বয় করতে কোম্পানিগুলো ট্যারিফ কমিশনকে প্রস্তাব দেয়। এরপর কমিশন তা পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী নির্ধারণ হয় তেলের মূল্য। দেশে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির পর পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে তেল উৎপাদন করে।
দেশের ব্যবসায়ীরা মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে হালকা পরিশোধিত আকারেও বিডি পাম অয়েল আমদানি করে। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। বছরে ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়। এছাড়া মাড়াই করে পাওয়া যায় আরো তিন লাখ টন সয়াবিন।
এর আগে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দরপতন যেভাবে হয় দেশের বাজারে সেভাবে দাম কমানো হয় না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে দেরি করেন না আমদানিকারকরা।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি হয়।
প্রসঙ্গতে ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম বেড়ে গেলে গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। সুযোগটি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আছে। বর্তমানে পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement