২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানীর বিশাল সমাবেশে মির্জা ফখরুল

সরকার হটাতে রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিন

নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন (ইনসেটে) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

সরকার হটাতে নেতাকর্মীদের ‘রাজপথ দখলে’র প্রস্তুতি নেয়ার ডাক দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক বিশাল সমাবেশে এই আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এই লড়াই-সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ আমাদেরকে দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট দানবীয় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের একটা সমাজ তৈরি করব।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- আর কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন আপনারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে হবে।


আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা- জেলা-মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে বলে ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, আগামী রোববার জেলাপর্যায়ে সমাবেশ আছে। সেই সমাবেশগুলো আমরা করব। এরপর আগামী ২২ তারিখ থেকে সব উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ব এবং সেই একইভাবে প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব ইনশাআল্লাহ।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে মঞ্চের ব্যানারে লেখা ছিল- জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত নূরে আলম ও আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ।’ ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বড় ছবির পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ছবিও ছিল। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। বেলা ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকেল ৬টার পর। তবে তার আগেই সকাল ১০টা থেকে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুটপাথে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়াপল্টনের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল। সমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনের সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সাদা পোশাকের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। দুপুর থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করলে নয়াপল্টনে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, পুরানা পল্টন, আরামবাগ সড়কসহ তার অলিগলিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সমাবেশে নরসিংদী থেকে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, রফিকুল আমিন ভুঁইয়া রুহেলের নেতৃত্বে সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন। এছাড়া গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরাও সমাবেশে ছিলেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে চাল, ডাল, তেলসহ সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেক দিকে বিদ্যুতের যে সমস্যা সেটা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য আমার দেশে যে গ্যাস আছে সেই গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। তাদের নিজস্ব লোকদের দিয়ে গ্যাস আমদানির ফলে আজকে বিদ্যুতের দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে তাদেরকে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। গত সাত বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের প্রশ্ন ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথায় গেল? কারা নিয়ে গেল? তা জনগণ জানতে চায়।


ছাত্রদল-যুবদলসহ নবীনদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘জেগে’ উঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের তরুণ সমাজ, যুবসমাজ তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। তাদেরকে আজকে নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের নিরাপত্তার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের সমৃদ্ধির স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে ন্যায়বিচার, সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার স্বাধীনতা। নতুন বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করব তারেক রহমানের নেতৃত্বে। সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বাধা প্রদানের অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারী, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কথা বলেছেন, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এদেশে যখন গণতন্ত্র ছিল না, তখন সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরপর স্বৈরাচার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করতে হবে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, গত তিন বছরে ৫৪ হাজার কোটি টাকা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। এভাবে দেশটাকে আওয়ামী লীগ দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের দাবি একটাই- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচন কমিশন বাতিল। রাস্তায় যখন নেমেছি দাবি আদায় না করে যাবো না।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনতার উত্তাল তরঙ্গ তা কখনো থামবে না। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন মিথ্যার বাউল সঙ্গীত গেয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আওয়াল মিন্টু এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো: সালাহউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement