২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আজ রাজধানীতে সমাবেশ

লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

-

বিএনপির কর্মসূচিতে হঠাৎ পুলিশের গুলিবর্ষণ রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। দেশজুড়ে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনায় এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির তৃণমূল থেকে কঠোর কর্মসূচির চাপ তৈরি হয়েছে। দলের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঢাকায় কয়েকটি কর্মসূচিতে সেই দাবির পক্ষে নেতাকর্মীদের সরব হতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডও চিন্তাভাবনা করছেন। অবশ্য এই মুহূর্তে কঠিন কোনো কর্মসূচি দেয়ার পক্ষে নয় দলটির নীতিনির্ধারকেরা। কেননা তাদের মতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরো প্রায় দেড় বছর বাকি। তার আগেই এ ধরনের ঘটনা বিএনপিকে আগেভাগে মাঠে নামানোর কৌশল। এর মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের আবারো হামলা মামলায় ফেলা ও গ্রেফতার করার পরিকল্পনাও হতে পারে সরকারের। সরকার মুখে যাই বলুক বাস্তবে কতটা কঠোর হতে পারে সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণ যে তারই ইঙ্গিত-এটা নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, তৃণমূলের চাপ সত্ত্বেও সভা-সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিশাল সমাবেশ করবে দলটি। নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টা থেকে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর ২২ আগস্ট থেকে মহানগর, ওয়ার্ড, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে আজকের সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে ভার্চুয়াল সভা করে নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঢাকার পাশের জেলা যেমন, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি।

এ দিকে ভোলায় পুলিশের গুলিতে দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, যেই সরকার দেশের সংবিধান স্বীকৃত কর্মসূচিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে সেই সরকার কখনোই দেশের কল্যাণ করতে পারে না। পুলিশের এ ধরনের আচরণ আর যাই হোক সহ্য করার মতো নয়। ভোলা জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, তারা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সেদিন কর্মসূচি পালন করছিলেন। কিন্তু পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনা তাদের আরো বেশি মর্মাহত করেছে। এ জন্য তারা অবিলম্বে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার দাবি জানান। নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আমিন ভুইয়া রুহেল মনে করেন, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে গুলি করে দুইজন ভাইকে হত্যা করেছে। দলের হাইকমান্ডের উচিত কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা। তা না হলে এই ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারকে হটানো যাবে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবৈধ সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করে একটা বিষয় জানান দিয়েছে যে তারা নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করতে চায়। কিন্তু এই দেশের মানুষই তাদের রুখে দিবে। এই সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতা জবরদখল করে আছে। বিএনপি সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে আছে এবং শিগগিরই অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ- বেদনা কাজ করছে এবং সরকারের অযোগ্যতা, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যেভাবে তারা সংগঠিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তাতে আগামী দিনে যখনই আমরা কোনো কর্মসূচি দেবো তাতে জনগণ সম্পৃক্ত হবে।
এ দিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ ও সেমিনার অব্যাহত রাখবে বিএনপি। গত মঙ্গলবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গতকাল বুধবার বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীতে সমাবেশের বিষয়ে ও সভায় আলোচনা হয়। সমাবেশ সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
স্থায়ী কমিটির সভায় আগামী শনিবার (১৩ আগস্ট) বিদ্যুৎ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন, ১৭ আগস্ট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে এবং ১৯ আগস্ট জ্বালানি বিষয়ে সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ২২ আগস্ট থেকে মহানগর, ওয়ার্ড, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement