২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

টিকিট নিয়ে হুলস্থূল বাড়তি ভাড়া আদায়

মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ থাকায় ঘরমুখো মানুষ জিম্মি পরিবহন মালিকদের কাছে
-

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে গণপরিবহনের টিকিট নিয়ে শুরু হয়েছে হুলস্থুল কাণ্ড। বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না টিকিট। প্রতিটি পরিবহনই ঈদকে সামনে রেখে টিকিটের দাম বাড়িয়েছে কোনো ঘোষণা ছাড়াই। ঘরমুখো মানুষের কাছে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে নৌপথেও। এ দিকে ঈদে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষিধ আরোপ করায় পরিবহন মালিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের অনেকেই নিজস্ব অথবা ভাড়া মোটরসাইকেলে গ্রামে ফিরেছে। যে কারণে পরিবহনের যাত্রী অনেকাংশে কমে গিয়েছিল।
সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ৮ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য গত তিন দিন ঘুরছেন গাবতলীতে। কিন্তু দিনাজপুরের কোনো টিকিট পাননি। একই সময়ে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহেরও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। জামালপুরের বাসিন্দা আবু তালহা বলেছেন, গত ঈদে তিনি নিজস্ব মোটরসাইকেল নিয়েই বাড়ি গিয়েছিলেন। এবারে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। তালহা বলেন, তিনি শুনেছেন টিকিটের দামও আগের তুলনায় বেড়েছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই এই টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ সাদি নামের একজন বলেছেন, মিরপুর-২ থেকে সিরাজগঞ্জগামী অভি এন্টারপ্রাইজের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। এখন রাখা হচ্ছে ৪৫০ টাকা। শেখ সাদি জানান, কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে এটা ঈদের ভাড়া। এক সপ্তাহ ধরেই তারা এই ভাড়া নিচ্ছেন। কামাল নামের একজন বলেছেন, মোটরসাইকেলে যাত্রী আনানেয়ার কারণে গত ঈদে বাসগুলো যাত্রীশূন্য ছিল। যে কারণে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারেনি। যাত্রীদেরকেও গাড়িতে চড়তে বাধ্য করতে পারেনি।
একাধিক যাত্রী ও মোটরসাইকেল চালক বলেছেন, যাত্রীদের গলা কাটতেই মহাসড়কে দুর্ঘটনার অজুহাত তুলে এক এলাকার মোটরসাইকেল আরেক এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি, নৌপথেও মোটরসাইকেল বহন করতে পারবে না বলে গতকাল নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে এবার মানুষ বাধ্য হয়ে বাস-লঞ্চের যাত্রী হচ্ছে।
এ দিকে নৌপথে লঞ্চেও যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। গতকাল একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, লঞ্চে ডেকের ভাড়া ছিল আড়াই শ’ টাকা। সেখানে এখন তিন শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, ভাড়া নিয়ে কোনো প্রকার মনিটরিং না থাকার কারণে এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারছে পরিবহন ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছে। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
এ দিকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতকারীরা পড়েছেন ভাড়া বিড়ম্বনায়। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে এই রুটের পরিবহন ভাড়া। টোল দেয়ার অজুহাত তুলে বাড়ানো হচ্ছে এই ভাড়া। এমনকি সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই ভাড়ার চেয়ে প্রতিটি পরিবহনই ভাড়া আদায় করছে বলে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন।
রোড সেফটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, শুধু বাড়তি ভাড়াই নিচ্ছে না, তাদের লক্করঝক্কর গাড়িগুলোও তৈরি করা হচ্ছে। এসব গাড়ি রাস্তায় নষ্ট হবে, যাত্রীদের ভোগান্তি হবে। তিনি বলেন, আমরা মোটরসাইকেল বন্ধ করতে বলিনি। আমরা বলেছি, মোটরসাইকেল একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে চালাতে হবে। তিনি বলেন, ঈদের সময়ে যে পরিমাণ মানুষ যাতায়াত করে তা বাসে পরিবহন সম্ভব নয়। যে কারণে মানুষকে জিম্মি করে বাস মালিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করে।


আরো সংবাদ



premium cement