২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দনেস্কে তীব্র লড়াই

হামলায় বিরতি নিচ্ছে না রুশ বাহিনী; না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেনাকর্মকর্তারা, ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি
-

রাশিয়ার বাহিনীগুলো দনেস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করেছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, রাশিয়া লুহানস্ক প্রদেশ জয় করার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর মঙ্গলবার তাদের বাহিনীগুলো ব্যাপক গোলাবর্ষণের সমর্থন নিয়ে প্রতিবেশী অঞ্চলটিতে তীব্র লড়াইয়ে নেমেছে। ইউক্রেনের দনেস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশ সম্মিলিতভাবে দনবাস নামে পরিচিত। দেশটির শিল্প সমৃদ্ধ এ পূর্বাঞ্চলটি কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ দেখছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রাশিয়া জানিয়েছে, দনেস্ক ও লুহানস্ক, এ দুই গণপ্রজাতন্ত্রের (স্বঘোষিত) মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ হয়ে তারা ইউক্রেনের কাছ থেকে পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। রোববার লুহানস্কে ইউক্রেনের শেষ ঘাঁটি লিসিচানস্কের দখল রাশিয়ার বাহিনীগুলোর নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মস্কো এখন বিশেষভাবে প্রতিবেশী দনেস্কের স্লোভেনস্ক ও ক্রামাতোর্স্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দিকে মনোযোগ দেবে। এখন মূলত তাই হচ্ছে বলে তাদের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে লুহানস্ক অঞ্চলের প্রান্ত সীমায় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই হচ্ছে বলে ইউক্রেনের টেলিভিশনে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই। সিভারস্কি দনেছ নদী পার হওয়ার উদ্যোগ নিতে সেখানে রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনী ও রিজার্ভ বাহিনীগুলো পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
হামলায় বিরতি নিচ্ছে না রুশ বাহিনী : কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে প্রায় পুরো ইউক্রেনে বিমান হামলার সতর্কতা বেজেছে। আর তাই রুশ হামলা মোকাবেলায় কিয়েভকে আরো আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা। মঙ্গলবার রাতে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘এর আগে রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে কিছু সময়ের জন্য কোনো বিমান হামলার সতর্কতা ছিল না। তবে কিছু লোক এমন অস্বাভাবিক নীরবতার কারণে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন বোধ করেছিল। তারা অত্যাধিক চিন্তা করছিল, ভয় পাচ্ছিল, কোনো ধরনের ব্যাখ্যা খুঁজছিল যেন দখলকারীরা কিছু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে যুক্তি খোঁজা উচিত নয়। রাশিয়ান সেনাবাহিনী কোনো বিরতি নিচ্ছে না। তাদের একটিই কাজ- আর তা হলো মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া, মানুষকে ভয় দেখানো।’
না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেনাকর্মকর্তারা, ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি : এ দিকে প্রেসিডেন্টকে না জানিয়ে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে সাধারণ মানুষের যোগদান ও চলাচল সম্পর্কে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেনাকর্মকর্তাদের তিরস্কার করলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে না জানিয়ে ভবিষ্যতে যেন আর কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পরপরই ইউক্রেনীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী সব পুরুষকে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে। কিছু বিশেষ পেশার সাথে যুক্ত নারীদেরও সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল স্টাফ ঘোষণা দেন, সামরিক বাহিনীতে যোগদানের যোগ্য লোকজন বিনা অনুমতিতে নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবেন না। ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত, সংরক্ষিত ও সামরিক বাহিনীতে যোগদানের যোগ্য অন্যান্য লোকজন তাদের অঞ্চল ছেড়ে বের হতে চাইলে সামরিক আঞ্চলিক নিয়োগ এবং সামাজিক সহায়তা কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিতে হবে। যুদ্ধের সময় সামরিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ইউক্রেনে খুব একটা সমালোচনা না হলেও মঙ্গলবারের এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পরে এক ভিডিওবার্তায় ওই সিদ্ধান্তের জন্য সামরিক কর্মকর্তাদের তিরস্কার করেছেন খোদ প্রেসিডেন্টই। তিনি বলেন, আমি দেখছি, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন হচ্ছে। সমাজে ভুল বোঝাবুঝি, এমনকি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement