১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নবীনগর ও ঘিওরে ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি স্থাপনা

ছাতকে বন্যার পানি নামছে খুবই ধীরে
ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের বাটুরাবাড়ি এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পাড় ভাঙনের দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও মানিকগঞ্জের ঘিওরে হঠাৎ নদীভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেছে। নবীনগরে মেঘনা পাড়ের গ্রামগুলোতে নতুন করে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত শনিবারও দুই গ্রামের অন্তত ৩০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ঘিওরে পুরনো ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর পাড় এলাকায় ভাঙনে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলিজমি, বসতবাড়িসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ সদর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার ১০টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে অসংখ্য স্থাপনা। এ দিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে তৃতীয় দফা বন্যার শেষে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে আটকে থাকা পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে। এতে দুর্গত মানুষের দুর্গতির সময় আরো লম্বা হচ্ছে।
নবীনগরে ৩০টি বাড়ি মেঘনায় বিলীন
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, নবীনগরের মেঘনা তীরবর্তী চিত্রী কান্দাপাড়ার নদীভাঙনে সব কিছু হারানো ৭৫ বছরের বৃদ্ধ খোরশেদ আলম আহাজারি করে বলছিলেন, বাবারে আমার চারটা ঘরসহ সকল মালামাল তলিয়ে গেছে, কোনো কিছুই রাখতে পারি নাই। কোনো রকমে জীবন নিয়ে বেঁচে আছি, পড়নের এই কাপড় ছাড়া আমার আর কোনো কিছুই নাই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নদীর পাড়ে বসে এসব কথা বলছিলেন তিনি।
উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে আবারো ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে নবীনগরের পশ্চিম ইউনিয়নের চিত্রী গ্রামের কান্দাপাড়া ও দড়ি লাপাং গ্রামে চোখের পলকে ৩০টি বাড়িঘর ও ঘরের ভেতর থাকা ধান-চাল, আসবাবপত্র, গাছপালা, ফসলিজমি, বিদ্যুতের কয়েকটি খুঁটিসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে এক কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়েছেন।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, মেঘনার করাল গ্রাসে ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে চিত্রী গ্রামের অনেক পরিবার। বাড়িঘর হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে অনেকে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই এলাকার জনবসতির মাঝে। বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা আমরা পরিদর্শন করে এসেছি, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে। যাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, তাদেরকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে দেয়ার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ভাঙন রোধকল্পে এমপি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
ঘিওরে ঝুঁকিতে ২ শ’ বসতবাড়ি, স্কুল
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানিকগঞ্জের ঘিওরে নদীভাঙনের মাত্রা বাড়ছে। পুরনো ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর পাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলিজমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইছামতির ভাঙনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রছুলপুর এলাকার ১০টি পরিবারের বসতবাড়ি এবার বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পাশের কুঠিবাড়ী, রামকান্তপুর ও কুস্তার আরো ১৫টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাট অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। চরম ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কুস্তা ব্রিজ, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর কবরস্থান, কুস্তা কবরস্থান, ঘিওর কেন্দ্রীয় শশ্মান ঘাট, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চবিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, ব্রিজ, বাজার, হাট, সরকারি খাদ্য গুদামসহ বেশ কিছু স্থাপনা। ভাঙন রোধে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্রমেই নাজুক আকার ধারণ করছে। ফলে এসব এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ভাঙনকবলিত এলাকা রসুলপুরের বাসিন্দা ঘিওর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতি বছরই নদীভাঙন শুরু হয়। আমার বাড়ি ভাঙন এলাকায় রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ আঁতকে উঠি। গত বছর বর্ষায় রসুলপুর এলাকার কয়েকটি পরিবারের বাড়িঘর নদীতে চলে যায়।
এ দিকে ইছামতির ভাঙনরোধে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা, বাজার, রাস্তাঘাটসহ শত শত বাড়িঘর। গত বছর বর্ষার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরনো ধলেশ্বরী নদীর কুস্তা, নারচী পাড়ে ভাঙন রোধকল্পে প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র স্রোতে ও ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাঁধের জিও ব্যাগ। চলতি বছর বাঁধ কিংবা প্রতিরক্ষামূলক জিও ব্যাগ স্থাপনের কোনো কাজ না করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে চলতি বছর শ্রীধরনগর, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার এলাকার দু’টি স্থাপনাসহ কমপক্ষে ২০টি বসতবাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলিজমি, ব্রিজসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: হামিদুর রহমান বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। রসুলপুরসহ উপজেলার ১৪-১৫টি ভাঙন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
ছাতকে ধীরে নামছে বন্যার পানি
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ছাতক উপজেলায় তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতঘর ও রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে আছে। ফলে অনেক মানুষ এখনো নিজ বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ও উঁচু সড়কের ওপর প্রায় দুই হাজার দুর্গত পরিবার বসবাস করছেন। এসব পরিবারের মানুষের কপালে একটু খাবার জুটলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। কিছুটা উঁচু এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও হাওর ও নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত; যে কারণে মানুষ আছে চরম দুর্ভোগে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট বন্যায় নষ্ট হওয়ায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। খাবার পানির সঙ্কট রয়েছে সর্বত্র। এক মাসের ব্যবধানে দু’টি ভয়াবহ বন্যায় নিঃস্ব হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে।
মে মাসে প্রায় এক সপ্তাহ ও চলতি মাসে টানা ১০ দিন পানিবন্দী ছিলেন এই উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ। এখনো উপজেলার ইসলামপুর, নোয়ারাই, কালারুকা, চরমহল্লা, উত্তর খুরমাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। গত শুক্রবার রাত থেকে থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যার ক্ষত।
মোহনগঞ্জে বন্যার পানিতে দুই শিশুর মৃত্যু
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মার্জিয়া (৯) ও সাবিলা (৭) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সমাজ-সহিলদেও ইউনিয়নের উতিরকোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের কন্যা মার্জিয়া ও বাচ্চু মিয়ার কন্যা সাবিলা।
জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার আগে ওই দুই শিশু বাড়ির পাশে বন্যার আটকে থাকার পানির কাছাকাছি অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলা করছিল। এক সময় খেলতে খেলতে আকস্মিকভাবে সাবিলা পানিতে পড়ে যায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে মার্জিয়া পানিতে ঝাপ দেয়। কিন্তু সাঁতার না জানার কারণে উভয় শিশুই পানিতে তলিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে লোকজন তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষে মাছ ধরার জাল দিয়ে শিশুদের লাশ উদ্ধার করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল