২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দায় শোধে অপারগ চামড়া শিল্পের মালিকরা

ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড়
-

চামড়া শিল্পে ঋণ নিয়ে দায় শোধ করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়নে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ঋণ নেয়ার নীতিমালা শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ীরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে অনাদায়ী ঋণ নবায়ন করতে পারবেন। একই সাথে নতুন ঋণ নেয়ার জন্য কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট বা নবায়নের পর বাড়তি অর্থ পরিশোধ থেকেও তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ ঋণ নিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই দিনই তা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর কয়েকটি ব্যাংক ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার ঋণ দিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু নতুন ঋণ নীতিমালার শর্তের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এতে পানির দামে বিক্রি হয় কোরবানির পশুর চামড়া। ক্ষতিগ্রস্ত হন এর সুবিধাভোগী প্রান্তিক মানুষ। গত দুই বছর ধরে পানির দামে বিক্রি হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণ অনাদায়ী থাকলে ওই ঋণগ্রহীতা নতুন করে ঋণ পান না। যেমন, কোনো গ্রাহককে ব্যাংক ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়ার সীমা বেঁধে দিল। গ্রাহক ঋণ নিলো ১০ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণ নিয়ে গ্রাহক ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। পরিশোধ করেছেন মাত্র দুই কোটি টাকা। পরের বছর গ্রাহক নতুন করে ঋণ পাবেন মাত্র দুই কোটি টাকা। আবার অনাদায়ী ঋণ নবায়ন করতে হলে গ্রাহককে এককালীন ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এরপর ঋণ নবায়ন করে নতুন ঋণ নিতে হলে অবশিষ্ট ঋণের ওপর রফতানিমুখী শিল্প ঋণের জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। আর অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ অর্থ বাড়তি পরিশোধ করতে হয়। এ অর্থকে ব্যাংকিং ভাষায় কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট বলা হয়। এ কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট পরিশোধ করলেই কেবল নতুন ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হবে, অন্য দিকে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। এ লক্ষ্যে চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে।
গতকাল ব্যাংকগুলোর পরিপালনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো: আলী আকবর ফরাজী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিতরণকৃত চামড়া ঋণের অনাদায়ী অংশের মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে তিন বছরের জন্য ঋণ নবায়ন করতে পারবে। একই সাথে নতুন ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে যে কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট পরিশোধ করতে হয় সে শর্ত থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের অনাদায়ী ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে এবং কোনো প্রকার কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট পরিশোধ না করেই নতুন ঋণ নিতে পারবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। আর এ সুযোগ দেয়া হয়েছে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো প্রতি বছরই কোরবানির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু এ বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশই ব্যবহার করতে পারেন না। যেমন, গত ২০২১ সাথে গত বছর ঈদুল আজহার আগে ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এবারো বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement