২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্যা আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা

-

হঠাৎ করে গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষেরা জানান, মাঝখানে কয়েক দিন বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও দুই দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকালও কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা জেলার অনেক এলাকায় পানি বেড়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে দ্বিতীয় দফায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষজনের। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা।
অন্যদিকে পরপর দু’দফা বন্যার কবলে পড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর সবুজপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেন জানান, প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি এখনো মেরামত করতে পারিনি। এরমধ্যেই আবারও ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। খুব সমস্যায় আছি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের সহরত আলী জানান, গত বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ চরের মানুষ। প্রতিটি ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছিল। পানি নেমে যাওয়ার তিন/চার দিনের মাথায় আবার পানি। হাতে কাজ নেই। বউ, বাচ্চা নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি।
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নেই ধরলার অববাহিকায় অন্তত: ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ দ্বিতীয় দফায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পার্শ্ববর্তী পাঁচগাছী ও হলোখানা ইউনিয়নসহ ধরলা ও দুধকুমারের অববাহিকার ইউনিয়নগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানায়, উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামে ধরলা ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভাটিতে পানি কম থাকায় নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি কয়েক দিন কমলেও নতুন করে আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়া নতুন করে ঝিনাই ও ধলেশ্বরী নদীসহ জেলার সব নদনদীর পানি বাড়ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কোনো চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। পৌর এলাকার ১০/১২ আবাসিক এরিয়ায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। কারো ডিপটিউবওয়েলে পানি উঠছে না, কারো টয়লেট ওভারফ্লো হয়েছে। আর ঘরে পানি আর পানি। শহরের জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষরা ১৭ দিন ধরে বাসায় বসবাস করছে হাঁটু পরিমাণ পানি সাথে নিয়ে। তার মধ্যে পোকা মাকড়, মশা-মাছি, ব্যাঙ কোথায়ও সাপ ঢুকে পড়েছে ঘরের মধ্যে।
হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ভারতীয় ঢলের কারণে নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রহমতপুরে নদীর বাঁধের বিকল হওয়া দুটি গেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে তিনটি গ্রাম- রহমতপুর, দহগা ও কান্ধাল প্লাবিত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement