২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাস্তবতায় পদ্মা সেতু পিছিয়ে বাকি প্রকল্প

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ ৪৭.৫০ শতাংশ; দোহাজারী-রামু-গুমধুুম রেলপথ ৭০ শতাংশ
-

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা বহুমুখী সেতু। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও করোনা মহামারীসহ সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এখন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার অপেক্ষায়। ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ। কিন্তু একই সাথে চলমান দেশের ফাস্ট ট্র্যাক বা চরম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের তালিকায় থাকা অন্য সাত প্রকল্পের মধ্যে চারটির কাজের গতি ঢিমেতালে। এপ্রিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ ৪৭.৫০ শতাংশ, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ ৫৭.৫০ শতাংশ, দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ৭০ শতাংশ এবং মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত ১২টি প্রকল্প ৫৭.৯০ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই বিশেষ প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে, ২৯৪টি পাইল, ৪২টি পিলার, ৪১টি স্টিল ট্রাস, দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব, দুই হাজার ৯৬৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব, ৪৩৮টি সুপার টি গার্ডার, ৮৪টি রেলওয়ে আই গার্ডার, পাঁচ হাজার ৮৩৪টি রেলওয়ে স্লাব শিয়ার পকেট ফিলিং, ৩২৮টি রেলওয়ে স্ট্রিঞ্জার, ১২ হাজার ৩৯০টি প্রিকাস্ট প্যারাপেট ওয়াল, মূল সেতুর মুভমেন্ট জয়েন্ট ৮টি, ভায়াডাক্ট ১২টি, মুভমেন্ট জয়েন্ট, ওয়াটার প্রুভ কাজ, আশফাল্ট কাজ, ৩২৮টি স্টিল ল্যাম্প পোস্ট, ভায়াডাক্টের স্টিল ল্যাম্প পোস্ট ৮৭টি, মেইনটেন্যান্স গেনট্রি একটি, ৮৭টি আরসিটি ব্লিস্টার ভায়াডাক্ট, ৬.১৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। সেতু বিভাগের ওয়েবসাইটে দেয়া চলতি মে মাস পর্যন্ত তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।
রাশিয়া থেকে নেয়া ঋণে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এপ্রিল পর্যন্ত কাজের বাস্তব অগগ্রতি ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ৫১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এই পকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখানে রাশিয়ার ঋণ হলো ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করার কথা।
তালিকায় থাকা মহেশখালীর-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। এখানে ১২ শ’ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পসহ মোট ১২টি প্রকল্প। বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট খরচ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হলো ৫৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। যার বিপরীতে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪৫ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ রয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আগামী ২০২৩ সালের প্রকল্পটি শেষ করার কথা।
স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল সংযোগের জন্য নেয়া প্রকল্পটি কাজ হয়েছে মাত্র ৫৭.৫০ শতাংশ। বাস্তব কাজের অগ্রগতিতে খরচ হয়েছে ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ২২ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২১ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদিত খরচ হলো ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করে রেল চলাচল শুরু করার কথা।
আর দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির একযুগে অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ ৬ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এখন ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
যোগাযোগ খাতের আধুনিক ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ গত এপ্রিল পর্যন্ত। তবে অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৮১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইতে অনুমোদন নিয়ে শুরু করে। প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। আগামী ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
এ দিকে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দরের ভৌত কাজ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের জুলাইতে আরম্ভ হওয়া এই প্রকল্পটি চলতি বছর জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা। এই পর্যন্ত প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১৬২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭২ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রকল্প খরচের চার হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পুরোটাই সরকারি অর্থায়ন।
এ দিকে এডিপিভুক্ত নয় তবে ফাস্ট ট্র্র্যাকের তালিকার আরেকটি প্রকল্প রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৮০.৮৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ৪০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২২ সালের মার্চে বাস্তবায়ন করার কথা।


আরো সংবাদ



premium cement