তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে ইউক্রেন : জর্জ সোরোস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ মে ২০২২, ০০:০০
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলে আশঙ্কা করছেন বিখ্যাত মার্কিন ধনকুবের ব্যবসায়ী ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন খাতে অর্থদাতা জর্জ সোরোস। পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনকে মুক্ত সমাজের জন্য সবচেয়ে ‘বড় হুমকি’ উল্লেখ করে ৯১ বছর বয়সী এই মানবহিতৈষী ব্যবসায়ী বলেছেন, যদি বিশ্বকে রক্ষা করতে হয়, তা হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে পরাজিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
রয়টার্স জানায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে গেছেন জর্জ সোরোস। বুধবার সেখানে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যে আগ্রাসন চলছে, সম্ভবত এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত এবং যদি সত্যিই এমন ঘটে, সে ক্ষেত্রে আমি বলব, মানবসভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। এবং এ সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে যত দ্রুত সম্ভব পুতিনকে পরাজিত করতেই হবে। এটিই মূল কথা; এ ছাড়া আমাদের সামনে আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে দুই মাস সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ঘোষণার দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দানেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
চতুর্থ মাসে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের বিশেষ সামরিক অভিযান। যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ব্যাপকভাবে রাশিয়াবিরোধী অবস্থান নিয়ে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়া, পুতিন ও রুশ সরকারি কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতি; কিন্তু এখনো সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি মস্কো। দাভোস সম্মেলনে সোরোস দাবি করেন, যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা সদস্য হারিয়ে বর্তমানে মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থায় আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং এখন নিজেদের স্বার্থেই যুদ্ধবিরতি চান তিনি।
কিন্তু এখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে তার ফলাফল বিপদ ডেকে আনতে পারে, সতর্কবার্তা দিয়ে সোরোস বলেন, ‘এখন যুদ্ধবিরতির কোনো প্রশ্নই আসে না; কারণ দুর্বল অবস্থায় পুতিন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। আমরা কোনোভাবেই তাকে বিশ্বাস করতে পারি না। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র, মুক্ত সমাজব্যবস্থা দখল করছে দমনমূলক শাসকগোষ্ঠী। আজকের পৃথিবীতে মুক্ত সমাজের সবচেয়ে বড় হুমকি রাশিয়া ও চীন।’ যুদ্ধে ইউক্রেনের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এই প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি না, তবে আমার বিশ্বাস, এখনো লড়াই করার সুযোগ আছে ইউক্রেনের।
হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী জর্জ সোরোস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একজন। মূলত অর্থ ও ব্যাংক ব্যবসার সাথে যুক্ত তিনি। বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন নামের একটি দাতব্য সংস্থা রয়েছে তার। এরই মধ্যে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে এই সংস্থা কোটি কোটি ডলার দান করেছে।
ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে জার্মানি-পোল্যান্ড দ্বন্দ্ব : কথা ছিল, পোল্যান্ড ইউক্রেনের হাতে সোভিয়েত আমলের ট্যাংকগুলো হস্তান্তর করবে। আর সেই শূন্যস্থান পূরণে জার্মানি পোল্যান্ডকে দেবে অত্যাধুনিক সব ট্যাংক ও সামরিক সরঞ্জাম। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণে জার্মানি বেশ বিলম্ব করছে বলে অভিযোগ তুলেছে পোল্যান্ড। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে দুই দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। খবর ডয়চে ভেলের।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছে অনেক দেশ। তুলনামূলক কিছুটা দেরিতে হলেও জার্মানিও বাস্তবে বিপুল সহায়তা দিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রায়ই অঙ্গীকার ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যে বিস্তর ফারাকের কারণে জার্মান সরকার ঘরে-বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ছে।
ইউক্রেনের সরকার বারবার জানাচ্ছে, যে কাগজে-কলমে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও জার্মানি বাস্তবে অযথা বিলম্ব করছে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রের অভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সমস্যা হচ্ছে। এমনকি জার্মানির সদিচ্ছা নিয়েও ইউক্রেনের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে।
এবার পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আনজেই দুদা জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের সোভিয়েত আমলে তৈরি যেসব সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলো দ্রুত ইউক্রেনে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জার্মানি। শূন্যস্থান পূরণ করতে জার্মানিতে তৈরি সামরিক সরঞ্জাম হস্তান্তর করার কথা। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের দাবি, জার্মানি মোটেই পোল্যান্ডকে ট্যাংক সরবরাহের সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে না, যা গভীর হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। দুদা বলেন, জার্মানির আশ্বাসের ভিত্তিতে পোল্যান্ড এপ্রিল মাসেই ইউক্রেনে অনেকগুলো ‘টি-৭২’ ট্যাংক পাঠিয়েছে।
এমন অভিযোগের মুখে কূটনৈতিক পথে বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কাটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবিগনিয়েফ রাউ মঙ্গলবার বার্লিনে এক বৈঠকে এ সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বেয়ারবক বলেন, জার্মানির পক্ষে সবসময়ে চটজলদি ভারী অস্ত্র সরবরাহ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর মেরামতের প্রয়োজন হয় বা না থাকলে নতুন করে অর্ডার দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি। রাউ বলেন, আসলে খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর মধ্যেই এমন দ্বন্দ্বের অবকাশ রয়েছে। তবে সমস্যা মেটানোর জন্য সদিচ্ছার অভাব নেই।
রাশিয়া সব কিছু ধ্বংস করে দিতে চায় : জেলেনস্কি
রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনে আরো অগ্রসর হয়েছে এবং প্রধান প্রধান শহরগুলোতে আঘাত হানা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, রাশিয়ার সেনারা দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ‘দনবাস অঞ্চলের সব কিছু ধ্বংস করে’ দিতে চায়। বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
টেলিগ্রামে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘(এখানকার) পরিস্থিতি খুব কঠিন এবং দুর্ভাগ্যবশত এটি কেবল খারাপই হচ্ছে। পরিস্থিতি প্রতিদিনই, এমনকি প্রতি ঘণ্টায়ই আরো খারাপ হচ্ছে। রুশ সেনাবাহিনী সেভেরোদোনেতস্ক শহরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা