২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যাটে বলে জবাব দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা

-

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন শ্রীলঙ্কার পেসাররা। ২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাসের দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ২ উইকেটে ১৪৩ রান করেছেন সফরকারীরা। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে এখনো ২২২ রানে পিছিয়ে লঙ্কানরা। লিটন ১৪১ রানে আউট হলেও, মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ১৭৫ রানে।
এই ইনিংসে বাংলাদেশের ছয়জন ব্যাটসম্যান রানের খাতা খুলতে পারেননি। এরা হলেন মাহমুদুল হাসান জয়, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, খালেদ আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন এবং এবাদত হোসেন। তাতেই ছয় ডাকের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। এর আগে ছয় ডাকের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৫২।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিন শেষে ৮৫ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। মুশফিক ১১৫ ও লিটন ১৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাবধানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন তারা। দিনের অষ্টম ওভারে লিটনকে আউট করে শ্রীলঙ্কাকে দারুণ সূচনা এনে দেন পেসার কাসুন রাজিথা। ৯৩তম ওভারের প্রথম বলটি ভেতরের দিকে ঢুকছিল, তখন ব্যাট পেতে দেন লিটন। বল তার ব্যাটে লেগে দ্বিতীয় স্লিপে মেন্ডিসের হাতে জমা পড়ে। ফলে শেষ হয় লিটনের ক্যারিয়ার সেরা দুর্দান্ত ১৪১ রানের ইনিংসটি। ২৪৬ বলে ১৬টি চার ও একটি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান লিটন।
সেই সাথে শেষ হয় ৫১৩ বলে মুশফিক-লিটনের ২৭২ রানের জুটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম দিনে ২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর জুটি গড়েছিল মুশফিক-লিটন।
লিটনকে ফিরিয়েই ক্ষান্ত হননি রাজিথা। একই ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে ৩২ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেনকেও বিদায় দেন রাজিথা। তার আউট সুইংয়ের বল খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা মোসাদ্দেক। তাতে ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন রাজিথা।
দলীয় ২৯৬ রানেই ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট পতনের পর চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও তাইজুলকে নিয়ে দলের স্কোর তিন শ’ পার করেন মুশফিক। এরপর রানের গতি বাড়ান তিনি। এতে ২৯১ বলেই টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো দেড় শ’ রান স্পর্শ করেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয়বার। এর আগের চারটি দেড় শ’র মধ্যে তিনটিতেই ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। তাই আরো একটি ডাবলের প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশ।
তবে মুশফিকের দেড় শ’ রানের পর ফিরতে হয় তাইজুলকে। পেসার আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সার সামলাতে না পেরে, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২টি চারে ৩৭ বলে ১৫ রান করা তাইজুল। দশ নম্বরে নামা খালেদ আহমেদ দুই বলের বেশি খেলতে পারেননি। আসিথার চতুর্থ শিকার হন তিনি। দলীয় ৩৪৯ রানে নবম উইকেট পতন ঘটে বাংলাদেশের। ফলে প্রথম সেশনের মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি মুশফিক। শেষ ব্যাটার এবাদত হোসেনকে নিয়েই মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান মুশফিক। তখন বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ৩৬১ রান। বিরতির পর ২০ বলের মাথায় পতন হয় বাংলাদেশের শেষ উইকেটের। মুশফিকের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন এবাদত। ৩৬৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ২০ বল খেললেও রানের খাতা খুলতেই পারেননি এবাদত। বাংলাদেশের ইনিংসে মোট ছয় ব্যাটার খালি হাতে আউট হলেন। সতীর্থ বিদায় নিলে এক প্রান্ত আগলে ৩৫৫ বলে ২১ চারে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কার পেসার রাজিথা ৬৪ রানে ৫টি ও আসিথা ৯৩ রানে ৪টি উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কান দুই ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো ও অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ ৯৫ রানের জুটি গড়েন। অবশ্য প্রথম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছিলেন ওশাদা। লেগ বিফোর আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। ১৫তম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ওশাদাকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলে ছিলেন স্পিনার তাইজুল। কিন্তু এবার আম্পায়ারস কলের কারণে রক্ষা পান ওশাদা।
ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ওশাদাকে জীবন দেন সাকিব। উইকেট ছেড়ে খেলে সাকিবের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়েছিলেন ওশাদা। বলটি হাতের মধ্যে রাখতে পারেননি সাকিব। পরে সাকিবকে ছক্কা মেরেই হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ওশাদা। তিনবার জীবন পাওয়া ওশাদাকে ৫৭ রানে আউট করেন এবাদত। অফ-স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দেন। ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৭ রান করেন তিনি।
তিন নম্বরে নেমে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কুশল মেন্ডিস। দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে ১১ রান করা মেন্ডিসকে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব। এরপর রাজিথাকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন করুনারতেœ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭০ রানে অপরাজিত তিনি। শূন্য হাতে অপরাজিত রাজিথা। বাংলাদেশের এবাদত ৩১ রানে ও সাকিব ১৯ রানে একটি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১১৬.২ ওভারে ৩৬৫ (মাহমুদুল হাসান জয় ০, তামিম ইকবাল ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৮, মুমিনুল হক ৯, মুশফিকুর রহীম ১৭৫*, সাকিব আল হাসান ০, লিটন দাস ১৪১, মোসাদ্দেক ০, তাইজুল ১৫, খালেদ ০, এবাদত ০, রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ৪/৯৩, জয়াবিক্রমা ০/১০৮, রমেশ ০/৫৩, ধনাঞ্জয়া ০/২৭)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : দ্বিতীয় দিন শেষে ৪৬ ওভারে ১৪৩/২ (ওশাদা ৫৭, করুনারতেœ ৭০*, কুশল মেন্ডিস ১১, রাজিথা ০*, খালেদ ০/২৭, এবাদত ১/৩১, সাকিব ১/১৯, মোসাদ্দেক ০/১৪, তাইজুল ০/৪৯)।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল