২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
প্রবাহ বাড়াতে রেমিট্যান্স নীতিমালা শিথিল

ডলারের দাম বাড়ল ৪০ পয়সা

ব্যাংকে নগদ বিক্রি ৯২ থেকে ৯৮ টাকা
-

আবারো বাড়ানো হলো ডলারের দাম। ছয় দিনের মাথায় এবার প্রতি ডলারে ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায় উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকা দরে। তবে চাহিদার চেয়ে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় গতকালও সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাড়ে ৯৭ টাকা দরে নগদ ডলার কিনে ৯৮ টাকা বিক্রি করেছে। নগদ ডলারের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও খোলাবাজারে ডলারের দাম কমে এসেছে। গতকাল সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে ৯৬ টাকা দরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে বিভিন্ন ব্যাংক আমদানির জন্য বিভিন্ন দরে ডলার বিক্রি করত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমদানির জন্য ডলারের দাম ৮৮ টাকার বেশি রাখা যাবে না মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে কোনো ব্যাংকই এখন এ খাতে এর দাম বাড়াতে পারছে না। তবে অন্যান্য খাতে ব্যাংকভেদে ডলারের দামে বেশ হেরফের রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চলমান পরিস্থিতিতে চলতি মে মাসেই আন্তঃব্যাংকে তিন দফায় ডলারের দাম বাড়িয়েছে ১ টাকা ৪৫ পয়সা। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বাড়িয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সা; অর্থাৎ ওই হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরার জন্য ডলারের দাম বাড়ানো হলেও এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রার বিনিময় হারজনিত কারণে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন ব্যয়। আর উৎপাদন ব্যয় বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান ধরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এর মধ্যে এত দিন সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছিল। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ না করলে এর আগেই ডলারের দাম আরো বেড়ে যেত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজার ধরে রাখার এ চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। একই সাথে চাহিদার লাগাম টেনে ধরতে অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো ব্যাংক কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল করছে কি না তা তদারকি করা হচ্ছে। এর ফলে কার্ব মার্কেটে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলেও ব্যাংকের নগদ ডলারের ক্ষেত্রে তা পাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে এখনো ডলারের সরবরাহ কম। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোকে বেশি দরে ডলার কিনেই তা গ্রাহকদের বেশি দরে সরবরাহ করতে হচ্ছে। গতকাল যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ছিল ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা, সেখানে কিছু কিছু ব্যাংক নগদে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা।
ওই কর্মকর্তার মতে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। কারণ বাজারে ডলারের চাহিদা অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এক দিকে যেমন পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনি চাহিদা কমানোর দিকে আরো নজর দিতে হবে। তবে গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পণ্য আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশ পরিশোধ না করে বাকি রাখা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় এখন তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সাথে চলতি এলসির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। সবমিলেই একসাথে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে ডলারের ওপর।
রেমিট্যান্স বাড়াতে নীতিমালা শিথিল : এ দিকে রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়াতে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে কোনো কাগজপত্র বিদেশ থেকে পাঠাতে হবে না। বিদ্যমান হারেই অর্থাৎ আড়াই শতাংশ হারে এসব রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা দেয়া হবে। এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকালই ব্যাংকগুলোকে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, রেমিট্যান্সের প্রণোদনার অনিয়ম ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বড় অঙ্কের রেমিট্যান্সের বিপরীতে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ওই রেমিট্যান্সে কোনো প্রণোদনা দেয়া হবে না। একই সাথে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার উপরে রেমিট্যান্স এলে রেমিট্যান্সের কাগজপত্রাদি বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে না পাঠালে প্রণোদনা দেয়া হবে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের কাগজপত্রাদি ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকার উপরে রেমিট্যান্সের বিপরীতেও আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে। এ নির্দেশনা দেয়ার ফলে রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া বড় অঙ্কের রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা দেয়া হলে এ সুযোগ অনেকেই নিতে চাইবে। রেমিট্যান্স না হয়েও অন্য উপায়ের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনে অসাধুরা প্রণোদনার অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement