১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১০ মাসে ৫৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন

স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতি পৌনে ৪০ শতাংশ; ৩০ শতাংশের নিচে ৭ মন্ত্রণালয়
-

নতুন অর্থবছর দ্বারপ্রান্তে অথচ দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হার হতাশাজনক। রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, মহামারী করোনার প্রকোপও নেই। তারপরও উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মাত্র ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। আলোচিত স্বাস্থ্য খাতের বাস্তবায়ন হার মাত্র ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়ন হার ৩০ শতাংশের কম বলে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে।
আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার দু’লাখ ৭১ হাজার ১৭৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর ১০ মাসে বাস্তবায়ন বা খরচের অগ্রগতি এক লাখ ১৯ হাজার ৮২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অবশ্য গত চার বছরের তুলনায় এই হার বেশি। অর্থবছরের দু’মাসে প্রায় ৪৫ শতাংশ অগ্রগতি করতে হবে যদি শতভাগ বাস্তবায়ন দেখাতে হয়, যা আদৌ সম্ভব নয়। গত চার বছরে বাস্তবায়ন হার ছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫২.৪২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৪.৯৪ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৯.১৩ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৪৯.০৯ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা খাতের অগ্রগতি মাত্র ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্টসহ ৪৭টি প্রকল্পের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৯৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যেখানে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৯৭০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পুরো অর্থবছরই এই খাতটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৯.৮৪ শতাংশ অগ্রগতি স্বাস্থ্যসেবা খাত প্রকল্পের, যেখানে এই ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার ২৪.০৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আরএডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একই সময়ে তারা ব্যয় করেছে ৫২.০৩ শতাংশ বা এক হাজার ৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পাঁচ মাসে ২০ প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল ৪৭১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ১৮.৪৪ শতাংশ।
বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ ১৫ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ৫৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এই ১৫ মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৮০ হাজার ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৫৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্তদের বাস্তবায়ন হার থোকসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে ৬০.৬৪ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৫৩.৪৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগে ৬০.৩১ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৬১.০৫ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ৬০.৮৬ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৩০.৭৫ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৪৭.২৮ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৫৩.২৮ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৫৩.৩৮ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৫৪.৫৮ শতাংশ, সেতু বিভাগে ৫০.৭৭ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৪৩.৭৬ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৪০.৫২ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৮২.৭৭ শতাংশ, থোক বরাদ্দসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অগ্রগতি ৪৫.১৫ শতাংশ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, সরকার প্রতি বছর বড় এডিপি গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে পারে না। আর অর্থছাড় কম হওয়ার কারণে ঠিকাদার বা প্রকল্প কর্তৃপক্ষও প্রকল্পের গতি সেভাবে বাড়াতে উদ্যোগী হয় না। ফলে প্রথম দিকে এডিপি গতি পায় না। তিনি বলেন, প্রথম দিকেই বাস্তবায়নের গতি কম হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের অর্থছাড় করতে না পারা। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন শ্লথ হয়। তিনি বলেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার করা।


আরো সংবাদ



premium cement