২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসির সংলাপে যাবে না বিএনপি

-

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার ‘গ্রহণযোগ্য সমাধান’ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপে অংশ নেবে না বিএনপি। দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশন যে সংলাপ আয়োজনের চিন্তা করছে, সেটিও বর্জন করবে দলটি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। দুই-এক মাসের মধ্যেই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই আলোচনা হতে পারে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলটির মূল চাওয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। এটি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপে তারা অংশ নেবে না। ইসির সংলাপেও যাবে না তারা।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এ ধরনের সংলাপ কিংবা আলোচনা একটি ‘ফাঁদ’, সরকারের এজেন্ডা ‘হালাল’ করার একটি মাধ্যম মাত্র। এক্ষেত্রে তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই সংলাপে বলা হয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে গেছে। ‘ন্যাড়া বারবার বেল তলায় যায় না’ সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এমন কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন কঠিন হবে।’ এর কয়েক দিন পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে।’ জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নির্বাচন নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এ ধরনের বক্তব্যকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার ‘ফাঁদ’ হিসেবে তারা এসব কথা বলছেন বলে বিএনপির নেতারা দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে আলোচনা করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। একমাত্র সংলাপ হতে পারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কিভাবে হবে, সেই আলোচনায়।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, রাজনৈতিক ফোকাস নষ্ট করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংলাপে বিএনপিকে ডাকার কথা বলেছেন। বিএনপি কোনো সংলাপে যাবে না। বিএনপির দাবি একটাইÑ এই সরকারের পদত্যাগ।

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে গত ৬ এপ্রিল সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা কিছুই বলব না। কারণ, যে সংবিধান বলবৎ আছে, তার অধীনে আইন ও সংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও পরবর্তী সময়ে কমিশনের সংলাপেও যায়নি বিএনপি। যদিও এর আগে দুটো কমিশন গঠন প্রক্রিয়াতেই দলটির অংশগ্রহণ ছিল। ২০১৬ সালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েছিল বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল হুদা কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল বলেন, এই কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সাথেও সংলাপ ভেস্তে গেছে। ওই বাস্তবতার নিরিখে কমিশনের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল সব পক্ষকে আগে আস্থায় নেয়া। কিন্তু এই কমিশন বিশিষ্টজনদের নিয়ে যে সংলাপ করেছে, সেটাতেও অধিকাংশ আমন্ত্রিতরা যাননি। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সাথে সংলাপেও অনেকে যাননি। ফলে, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মূল পক্ষ যেহেতু রাজনৈতিক দল, বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, সেক্ষেত্রে আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে হবে।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কেমন হবে, সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে তেমন কোনো এখতিয়ার নেই। সেক্ষেত্রে ইসির সংলাপে অংশ নিয়েও কোনো লাভ নেই।

বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দলটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনেও না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement