১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খোলাবাজারে ডলার সঙ্কট প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরি

সোনার দাম ভরিতে বাড়ল পৌনে দুই হাজার টাকা
-

দেশে প্রথমবারের মতো খোলা বাজারে ডলার সেঞ্চুরি করল। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম ৫ টাকা বেড়ে ১০৩ টাকা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জ থেকে গ্রাহকদের প্রতি ডলার পেতে ১০১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ হার আরো বেড়ে যেতে পারে। এ দিকে গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ১০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়ে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের দিন প্রতি ডলারে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে সাড়ে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রার দামও বেড়েছে। এর মধ্যে পাউন্ড ১০৮ টাকা, ইউরো ৯২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বর্ণের দামও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। প্রতি ভরি সোনার দাম সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ছে। এতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলঙ্কার তৈরি করতে লাগবে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা। নতুন এই দর আজ বুধবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে। গতকাল বিকেল পৌনে ৬টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির এ তথ্য জানায় বাজুস।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পাওয়া মানিচেঞ্জারগুলোও ডলার বিক্রি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে ২৩৫টি মানিচেঞ্জার রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে ১৭২টি। বাকি ৬৩টি সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান আয় হয় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে। সাধারণত. বিদেশ থেকে যারা শ্রমিক বা পর্যটক দেশে ফিরে আসেন তাদের কাছে থাকা নগদ বৈদেশিক মুদ্রাবাজার মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ডলার কিনে থাকে। আবার যারা বিদেশে চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণের জন্য যান তাদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা অপেক্ষাকৃত বেশি মূল্যে বিক্রি করেন। কেনা ও বিক্রির মধ্যে সাধারণত ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পার্থক্য থাকে। আর এ পার্থক্যই হলো তাদের মুনাফা। এ মুনাফা দিয়ে তারা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভবনভাড়াসহ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেন।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল পাড়ার একাধিক মানিচেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, হঠাৎ খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আগের দিন যেখানে ৯৮ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে গতকাল সকাল থেকেই চাহিদা বেশি থাকায় ১০০ টাকা করে বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু দিন যতই গড়তে থাকে, ডলারের চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নিজেদের কাছে থাকা ডলার বিক্রি হয়ে যায়। তারপরেও চাহিদা বাড়তে থাকায় দিনের শেষ ভাগে এসে অন্যের কাছ থেকে ডলার কিনে চাহিদা মেটানো হয়। এভাবে দিন শেষে ১০৩ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি করা হয়, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। ইতঃপূর্বে আর কখনো ডলারের দাম এতটা উঠেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা যেসব নগদ ডলার নিয়ে আসতেন সেগুলোর একটি অংশ কার্ব মার্কেটে বিক্রি করতেন। সেগুলোই ডলার পাওয়ার তাদের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনার পর ওই উৎস থেকে ডলার পাওয়া কমে গেছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে ডলারের সঙ্কট হওয়ায় কার্ব মার্কেটে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে অনেকেই কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি করতে আসে না। তবে অনেকে বেশি দামের আশায় মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার বিক্রি করছে।
জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ মাসে সাত বার ডলারের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে জানুয়ারির প্রথম দিকে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করা হয়। ২৩ মার্চ ২০ পয়সা, ২৭ এপ্রিল ২৫ পয়সা, ৯ মে ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। ১৬ মে এক লাফে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে সাড়ে ৮৭ টাকা করা হয়। সর্বশেষ গতকাল আবার ১০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে ব্যাংকগুলোও এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানির জন্য প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯০ থেকে ৯৪ টাকায়। আগাম ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে দাম আরো বেশি। প্রতি ডলার ৯৪ থেকে ৯৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ৮৭ টাকা ৮৮ টাকা দরে। ডলারের সাথে সমন্বয় রেখে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দামও বাড়ানো হয়েছে।
বাজারে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ৫১৫ কোটি ডলারের জোগান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেমে টাকার মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা বেশি বাড়লেই দাম বাড়াতে হচ্ছে।
ডলারের দামের প্রভাব স্বর্ণে : ডলারের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বর্ণের দামও বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পৌনে দুই হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে মূল্যবৃদ্ধির এ তথ্য জানায় বাজুস। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ বুধবার থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার কিনতে লাগবে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট ৭৪ হাজার ৭০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬৪ হাজার ৩৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের অলঙ্কারের ভরি বিক্রি হবে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকায়।


আরো সংবাদ



premium cement