২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নাঈমের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং : ম্যাথুজের আক্ষেপ

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৩৯৭ (১৫৩ ওভার); বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৭৬/০ (১৯ ওভার)
নাঈম হাসানের বলে ১৯৯ রানে আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস : নয়া দিগন্ত -

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যত ফোকাস বাংলাদেশের বোলার নাঈম হাসান ও শ্রীলঙ্কান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে ঘিরে। দীর্ঘ ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন নাঈম। তার ১০৫ রানে ৬ উইকেট শিকারে ৩৯৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। দলকে এতদূর নিয়ে এসে ১৯৯ রানে আউট হয়ে দিন শেষে আক্ষেপে পুড়েছেন ম্যাথুজ। ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছেন লঙ্কান সাবেক এই অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষে ১৯ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ। সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৭৬ রান। মাহমুদুল হাসান জয় ৬৬ বলে ৩১ ও তামিম ইকবাল ৫২ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেছেন। দু’জনই পাঁচটি করে চার মেরেছেন। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৩২১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান করেছিল সফরকারীরা। সেঞ্চুরি তুলে ১১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ৩৪ রান নিয়ে ম্যাথুজের সঙ্গী ছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল। দলীয় স্কোর ৪০০ বা ৫০০ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। আর বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলেছিলেন লঙ্কানদের ৪০০-এর আগেই আটকে রাখা লক্ষ্য।
আগের দিন ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া ম্যাথুজ ও চান্দিমাল বাংলাদেশ বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে শুরু করেন। ২০৮ বল মোকাবেলা করে জুটিতে ১০০ পূর্ণ করেন তারা। ম্যাচে শ্রীলঙ্কান ইনিংসে জুটিতে প্রথম শতরান। সেই সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬৪তম ম্যাচে ২১তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন চান্দিমাল। এ অবস্থায় চান্দিমালকে থামান নাঈম। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরে আউট হন তিনি। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি। ফলে ম্যাথুজের সাথে ২৮৭ বলে ১৩৬ রানের জুটি ভাঙ্গে চান্দিমালের। ১৪৮ বলে দু’টি চার ও তিনটি ছক্কায় ৬৬ রান করেন তিনি।
ওই ওভারেই ক্রিজে নতুন ব্যাটার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলাকেও বিদায় দেন নাঈম। তিন বলে ৩ রান করে নাইমের বলে বোল্ড হন ডিকবেলা। নাঈমের জোড়া আঘাতে প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ। এ সময় শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৬ উইকেটে ৩২৭। ম্যাথুজ ১৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। বিরতি থেকে ফেরার পর প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন সাকিবও। দ্বিতীয় বলে রমেশ মেন্ডিসকে বোল্ড করেন। আর পরের বলে লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন। হ্যাটট্রির সুযোগ সৃষ্টি করলেও সেটি রুখে দেন বিশ^ ফার্নান্দো। পরে এই বিশ^, ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে।
ম্যাথুজের সাথে উইকেটে থিতু হন দশ নম্বরে নামা বিশ^। এমন অবস্থায় ২৯৩ বলে দেড়শ ছুঁয়ে নিজের ইনিংসকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাথুজ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ দেড়শ রানের ইনিংসকে ডাবলের দিকেই নিচ্ছিলেন তিনি। চা-বিরতি পর্যন্ত তার রান ছিল ১৭৮। চা-বিরতির আগের ওভারে ম্যাথুজ-বিশ^ জুটিটি ভাঙ্গতে পারত। সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন বিশ^। মিড-অনে ক্যাচের সুযোগ পান মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বল তার হাত ফসকে যায়। ১৬ রানে জীবন পান বিশ^। তবে বিরতির আগে শেষ ওভারে শরিফুল ইসলামের বাউন্সারে মাথার পেছনে হেলমেটে আঘাত পান বিশ^। বিরতির পরপরই ব্যাট হাতে নামতে পারেননি তিনি।
ফলে বিরতির পর শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দোকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন ম্যাথুজ। বিরতির পর প্রথম ওভারেই আসিথাকে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। জীবন পেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের দক্ষতার সাথে সামলাতে থাকেন আসিথা। আর অন্য প্রান্তে গুটি-গুটি করে ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাথুজ। তবে নিজের ২৮ ও ইনিংসের ১৪৯তম ওভারে আসিথাকে দারুণ ঘূর্ণিতে বোল্ড করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাঈম। মেহেদি হাসান মিরাজের ইনজুরিতে ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই ইনিংসে পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেন নাঈম। ৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি।
পাঁচ উইকেট শিকার করা নাঈমের সাথে, তখন স্পটলাইটে ছিলেন ম্যাথুজও। কারণ ডাবল সেঞ্চুরির পথে তিনি। আসিথা যখন ফিরেন, তখন ১৯২ রানে ম্যাথুজ। এরপর ক্রিজে আসেন হেলমেটে আঘাত পাওয়া বিশ^। আহত অবসর নেয়ার আগে নবম উইকেটে ম্যাথুজের সাথে ১৪৭ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেখানে তার অবদান ছিল ৭৭ বলে ১৭ রান। তাই বিশ^কে নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবলের ব্যাপারে আত্মবিশ^াসী ছিলেন ম্যাথুজ। ১৫২তম ওভারের পঞ্চম বলে তাইজুলকে বাউন্ডারি মারেন ম্যাথুজ। আর শেষ বলে ১ রান নেন। এতে ১৯৭ রান দাঁড়ায় ম্যাথুজের।
নাঈমের করা ১৫৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে ১৯৯ রানে পৌঁছান ম্যাথুজ। এতে ফিল্ডারদের ৩০ গজের মধ্যে নিয়ে আসেন নাঈম। ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে ফিল্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সাকিবকে ক্যাচ দেন। ফলে ১ রানের জন্য ডাবল-সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়েন ম্যাথুজ। বিশে^র ১৪তম ব্যাটার হিসেবে এবং শ্রীলঙ্কার তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হওয়া ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন ম্যাথুজ। ১৯৯৭ সালে কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে সনৎ জয়সুরিয়া ও ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কুমার সাঙ্গাকারা টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন। ৩৯৭ বলে ১৯টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের নান্দনিক ইনিংসটি সাজান ম্যাথুজ। ৮৪ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন বিশ^।
ম্যাথুজকে শিকার করে টেস্টে এক ইনিংসে প্রথমবারের মত ষষ্ঠ উইকেট নেন নাঈম। ৩০ ওভারে ১০৫ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া সাকিব ৬০ রানে ৩টি ও তাইজুল ১০৭ রানে ১ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস-শ্রীলঙ্কা) :
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (ওশাদা ৩৬, করুনারতেœ ৯, কুশল ৫৪, ম্যাথুজ ১৯৯, ধনাঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৬৬, ডিকবেলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ^ ফার্নান্দো ১৭*, আসিথা ১, শরিফুল ০/৫৫, খালেদ ০/৬৬, নাঈম ৬/১০৫, তাইজুল ১/১০৭, সাকিব ৩/৬০)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৯ ওভারে ৭৬ (জয় ৩১*, তামিম ৩৫*, বিশ্ব ০/১৭, আসিথা ০/১৯, রমেশ ০/১৯, এম্বুলদেনিয়া ০/১৯)।


আরো সংবাদ



premium cement